করোনায় শ্বাস ব্যায়ামের উপকারিতা
করোনার মহামারি প্রতিনিয়ত বেড়েই চলেছে। এমন অবস্থায় আমাদেরকেই সচেতন হতে হবে। প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে এর বিরুদ্ধ এ। করোনার অন্যতম লক্ষন হল শ্বাসকষ্ট। হঠাত করে অক্সিজেন স্যাচুরেশন কমে যায় এই রোগে। এজন্য শ্বাস প্রশ্বাস এর ক্ষমতা বৃদ্ধির দিকে নজর দিতে হবে। এতে করে ফুসফুসের কার্যকারিতা বৃদ্ধি পাবে।
ডেইলি অন্তত ৪ থেকে ৫ মিনিট করে দিনে কয়েক বার ব্যায়াম করতে হবে। এতে করে ক্লান্তি আসলে সহজেই দূর হয়ে যাবে। আবার অভ্যস্ততা ও এসে যাবে।
শ্বাসপ্রশ্বাস এর ব্যায়ামের আলোচনায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এর অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা.নাসিম সুলতানা বলেন ” যারা আক্রান্ত হয়েছেন বা শনাক্ত হয়েছেন, তারা তাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করার দিকে নজর দিবেন। এতে করে মানসিক স্বাস্থ্য ভালো থাকবে। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও বাড়বে। এ সময়ে বলব যে, আপনারা ফুসফুসের ব্যায়াম বা শ্বাসযন্ত্রের ব্যায়ামটা নিয়মিতভাবে চালিয়ে যেতে হবে। কারণ, অনেক সময়ই কাঁশির সঙ্গে শ্বাসকষ্ট হতে পারে। শ্বাসযন্ত্রের ব্যায়ামটা যেন নিয়মিতভাবে চালিয়ে যাওয়ার দিকে খেয়াল রাখতে হবে ।’
মহাপরিচালক আরো বলেন “নির্দিষ্ট সময় অন্তর অন্তর বাতাস গ্রহণ আর ত্যাগ -এই প্রক্রিয়ায় ফুসফুসের ব্যায়াম করা যেতে পারে। এভাবে ফুসফুসের ব্যায়াম করে ফুসফুসের কর্মক্ষমতা বাড়ানো যাবে’”
নাসিমা সুলতানা আরও বলেন, “বেশি করে পানি খেতে হবে, তরল খাবার ও মৃদু গরম পানি পান করতে হবে। সঙ্গে আদা চা, মসলা দিয়ে চা গরম করে সেই পানিটা খেলেও শরীরে কিছু উপকার পাওয়া যাবে।”
ব্রিটিশ লাং ফাউন্ডেশনের মতে, গভীর শ্বাস ব্যায়াম নিউমোনিয়ার পর ফুসফুস থেকে কফ দূর করে বাতাস চলাচল এর ক্ষেত্রে সাহায্য করতে পারে। এ ব্যায়াম করতে ৫-১০ বার গভীর শ্বাস নিতে হবে। তারপর কয়েক বার জোরে কাশি দিয়ে পুনরাবৃত্তি করতে হবে। এতে ফুসফুস আরও কার্যক্ষম হবে।
করোনা ভাইরাসের ক্ষুদ্রতম কণা বা ড্রপলেট কত দূর যেতে পারে এটা জানতে পড়ুন
অ্যাকটিভ সাইকেল অব
ব্রিদিং টেকনিক::
⭕ফুসফুসে
কফ জমে থাকলে এই ব্যায়াম করে খুব সহজেই কফ দূর করা যায়।
⭕এই
ব্যায়ামটি আধশোয়া অবস্থায় করতে হবে। নাক দিয়ে জোরে শ্বাস নিতে হবে। এরপর কিছুক্ষণ
ধরে রেখে অন্তত ৩ সেকেন্ড ধরে রেখে এরপর জোরে মুখ দিয়ে ছাড়তে হবে। এরপর ১০ সেকেন্ড
বিরতি নিতে হবে। কম পক্ষে ২-৩ বার ব্যায়ামটি করতে হবে।
ইকোয়াল ব্রিদিং ::
⭕
এই পদ্ধতি ফুসফুসের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে।
⭕
প্রথমে রিলাক্স হতে হবে। এরপর ৫ সেকেন্ড শ্বাস নিয়ে বাতাস ধরে রাখতে হবে। ৫
সেকেন্ড ধরে রাখার পর আস্তে করে ছাড়তে হবে।
⭕
৩ বার পুনরাবৃত্তি করুন।
ডিপব্রিদিং
এক্সারসাইজ ::
⭕বাতাস
ধরে রাখার ক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য এই পদ্ধতি খুবই কার্যকর।
⭕দুই
হাত বুকের উপর আর কনুই পেছনের দিকে রেখে বুক প্রসারিত করুন। এরপর নাক দিয়ে বাতাস
নিয়ে কিছুক্ষন ধরে রেখে একটু পর আস্তে করে শ্বাস ছাড়তে হবে।
পালস রেট নিয়ন্ত্রন::
দেহ সোজা রেখে বসতে হবে। এরপর একবার ডান নাকের ছিদ্র বন্ধ করে বাম নাক দিয়ে বাতাস নিতে হবে। আবার বাম নাক বন্ধ করে বাতাস নিতে হবে। এতে করে কর্মক্ষমতা বেড়ে যায় বলে ধারনা করা হয় । এটি কয়েকবার পুনরাবৃত্তি করতে হবে।
পার্সড লিপ ব্রিদিং এক্সারসাইজ ::
⭕শ্বাস
কষ্টের রোগিদের জন্য এটি খুবই উপকারী। এতে করে রোগি আরাম পায়।
⭕প্রথমে
বাতাস টেনে নিন। কিছুক্ষন ধরে রাখুন। এরপর আস্তে আস্তে শিস দেয়ার মত করে ছাড়ুন।
বাতাস ছাড়ার সময় বেশি সময় নিয়ে বাতাস ছাড়বেন।
বেলিব্রিদিং
এক্সারসাইজ ::
⭕অনেক
ক্ষন বাতাস ধরে রাখার জন্য এই এক্সারসাইজ কার্যকর ভূমিকা পালন করে।
⭕বিছানায়
শুয়ে দুই হাটু ভাজ করে নিতে হবে।
⭕এর
পর এমন ভাবে শ্বাস নিতে হবে যাতে পেট
ফুলে ওঠে। ৪ সেকেন্ড ধরে রাখতে হবে। এরপর শিস দেয়ার মত করে আস্তে ছাড়তে হবে।
ব্যায়াম করার সময় অবশ্যই মাথায় রাখতে হবে ভুল ব্যায়ামে শরীরের যেন কোন ক্ষতি না হয়। প্রথমে কতটুকু এক্সারসাইজ দেহ সহ্য করতে পারে তা বুঝতে হবে। ভুল ব্যায়াম করলে মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে। এজন্য ব্যায়াম করার আগে কোনটা দেহের জন্য উপযোগী তা আগে দেখে শুনে বুঝে নিতে হবে।প্রয়োজনে ট্রেনারের থেকে পরামর্শ নিতে হবে।
করোনা প্রতিরোধে ফুসফুস সুস্থ রাখতে কি কি করনীয়::
নিয়মিত শরীরচর্চা:
শ্বাস ব্যায়ামের পাশাপাশি নিয়মিত অন্যান্য এক্সারসাইজ ও করতে হবে। সাইকেলিং, হাটা, ঘরে বসে যেসব এক্সারসাইজ করা সম্ভব ওগুলো নিয়মিত করতে হবে। তবে অতিরিক্ত এক্সারসাইজ ও শরীরের জন্য ক্ষতিকর। তাই কোনো প্রকার ক্ষতি যেন নাহয় সে ব্যাপারে খেয়াল রাখতে হবে।
বয়সভেদে সবার ব্যায়ামের ধরন এক রকম হবেনা। এ ব্যাপারে পারসোনা হেলথের প্রধান প্রশিক্ষক ও ডায়েটিশিয়ান শওকত আরা সাঈদা বলেছেন, “বয়স্কদের কমপক্ষে ৩০ মিনিট হাঁটার জন্য সময় রাখতে হবে। খুব ভোর হচ্ছে ব্যায়াম করার উপযুক্ত সময়। এসময় ব্যায়াম করলে শরীর ও মন প্রফুল্ল থাকে। তবে সকালে কোনো কারণে সম্ভব না হলে বিকেলে বা রাতেও ব্যায়াম করা যায়। ঘরেই করা যায় এমন ব্যায়াম নিয়েও তিনি বলেছেন”
করোনা চিকিৎসায় প্লাজমা থেরাপি খুবই কার্যকর এ সম্পর্কে জানুন
বিভিন্ন প্রকারের ব্যায়মঃ
⭕
দড়িলাফ : এটা খুবই ভালো ব্যায়াম। প্রথমে আস্তে আস্তে করে এরপর ধীরে ধীরে বাড়াতে হবে।
⭕পুশ
আপ : পুশ আপ করলে শারীরিক কাঠামো ঠিক থাকে,
হাতে জোর আসে, জমে থাকা মেদ কমে যায়।
⭕স্ট্যান্ড
জগিং : এক জায়গায় দাঁড়িয়ে থেকে জগিং করতে হবে। এতে শক্তি বাড়ে।
⭕ক্রাঞ্চেস
: মেঝেতে শুয়ে মাথা ও ঘাড় সামনের দিকে ঝুকিয়ে হাটু ভাজ করে পেটের উপর চাপ দিয়ে
বাতাস ধরে রাখতে হবে। ৩-৫ সেকেন্ড পর বাতাস ছাড়তে হবে। এতে করে মেদ কমবে। বাতাস
ধরে রাখার ক্ষমতা বাড়বে।
⭕লেগ
লিফটিং : এটি পেটের মাসেল গঠনে সাহায্য করে। মেঝেতে শুয়ে পা যতটা সম্ভব উপরের দিকে
তুলে রাখতে হবে কয়েক সেকেন্ড। এভাবে ১০-১৫ বার করতে হবে
উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রন::
যাদের উচ্চ রক্তচাপ আছে তারা এই রোগের ঝুঁকিতে আছেন বেশি। এজন্য রক্তচাপ নিয়ন্ত্রনে রাখতে হবে। নিয়মিত ব্লাড প্রেসার মাপতে হবে। কাচা লবন পরিহার করতে হবে। নিয়মিত রক্তচাপ নিয়ন্ত্রনের ওষুধ খেতে হবে।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রন::
ডায়াবেটিস হলে রোগি হাইপোগ্লাইসেমিক হয়ে যায় অনেক সময়। অর্থাৎ রক্তে শর্করা কমে যায়। এমন অবস্থায় ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রনে রাখতে হবে। নিয়মিত ইনসুলিন নিতে হবে। ডাক্তারের দেয়া বিধি নিষেধ মেনে চলতে হবে।
তরল খাবার আর পানিয় পান::
বেশি বেশি পানি পান করতে হবে। গরম চা, কফি, দুধ এগুলা খেতে হবে। পরিমিত পানি পান করলে দেহে তাপমাত্রার সমতা থাকবে। রক্ত চলাচল স্বাভাবিক থাকবে। ইলেকট্রোলাইট ব্যালেন্স হবে। ফুসফুস ভালো থাকবে বলে বিজ্ঞানীরা বলেছে।
ধূমপান থেকে বিরত থাকা::
সিগারেট,তামাক এসবের ধোয়া ফুসফুস এর শুধু
ক্ষতিই করেনা। অনেক জটিল রোগের কারন হয়ে দাঁড়ায়। তাই এসব থেকে বিরত থেকে থাকতে
হবে। সর্বোপরি ধূমপানকে না বলতে হবে।
ওজন নিয়ন্ত্রন::
অতিরিক্ত ওজন দেহের জন্য ক্ষতিকর। এতে করে
যে কোনো রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুকি বেড়ে যায়।রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়।
আবার বেশি স্থুল ব্যক্তির দেহে মেদ জমা হওয়ায় ডায়াফ্রাম উপরের দিকে উঠে আসার
সম্ভাবনা থাকে। এতে করে নিউমোনিয়া রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙকা বেড়ে যায়। করোনার ঝুঁকি কমাতে হলে ওজন কমানোর দিকে খেয়াল
রাখতে হবে। খাদ্যাভাসে নিয়ম কানুন মেনে চলতে হবে। অতিরিক্ত চর্বি জাতীয় খাবার
গ্রহন থেকে বিরত থাকতে হবে। নিয়মিত একটু হাটার অভ্যাস, হাল্কা ব্যায়াম করতে হবে।নিজের উচ্চতার অনুপাতে ওজন ঠিক
রাখতে হবে।