ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে যে ১০ টি খাবার খাবেন

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে যে ১০ টি খাবার খাবেন

ডায়াবেটিসে কি এমন রোগ একবার কারো শরীরে বাসা বাধলে তার মৃত্যুর আগ পর্যন্ত ছাড়ে না। ডায়াবেটিস আমাদের জীবনের গতিরোধ করে দেয়। ডায়াবেটিস রোগীদের সুস্থ থাকার প্রধান চাবিকাঠি হলো সচেতন জীবনযাপন এবং খাদ্যাভ্যাস নিয়ন্ত্রণ। আমাদের সকলের জানা উচিত ডায়াবেটিস রোগীদের খাবার তালিকা এবং ডায়েট চার্ট। কারণ ডায়াবেটিস হলে যদি সুস্থ থাকতে হয় তাহলে খাদ্যভ্যাস অবশ্যই নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। তবে শুধুমাত্র খাদ্যাভ্যাস নিয়ন্ত্রণ করলে ডায়াবেটিস থেকে নিরাপদ থাকা সম্ভব নয়। কারণ বেঁচে থাকতে হলে খাদ্যের গুরুত্ব অপরিসীম। এ কারণে ডায়াবেটিস হলে কোন খাবারগুলো খাওয়া যাবে না এটি যেমন জানা উচিত ঠিক এর পাশাপাশি কোন খাবারগুলো খাওয়া যেতে পারে তা জানা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আসুন আলোচনা করা যাক ডায়াবেটিস হলে কি খাবেন এবং এসকল খাবার আপনাদের জন্য কতটুকু উপকারী-

মাছ– মাছ হল প্রোটিনের একটি অন্যতম উৎস। মাছে পাওয়া যায় ওমেগা-থ্রি যা ফ্যাটি এসিড। এবং যতপ্রকার ফ্যাটি এসিড আছে এর ভিতরে ওমেগা-থ্রি সবচাইতে স্বাস্থ্যসম্মত যা আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য কোনো ক্ষতি করে না। তাই শুধুমাত্র ডায়াবেটিস রোগীদের ক্ষেত্রে নয় বরংচ সকলের ক্ষেত্রে মাছ খাওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তবে ডায়াবেটিস রোগীদের শরীরে প্রোটিনের ঘাটতি পূরণ করতে অবশ্যই মাছ খাওয়া উচিত। এবং তা তেলে ভেজে না খেয়ে গ্রিল করে খেলে আরও বেশি উপকার পাওয়া যায়। এবং এটি ডায়াবেটিস রোগীরা পালন করতে পারেন। তারা মাছ ভেজে না খেয়ে গ্রিল করে খাবেন তাহলে কোন প্রকার ক্ষতি করবে না বরংচ অনেক উপকার করবে।

ব্রোকলি- ব্রোকলি হচ্ছে একটি অত্যন্ত স্বাস্থ্যকর এবং উপকারী সবজি। বিশেষত ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য অত্যন্ত সুফল বয়ে আনে ব্রোকলি। ব্রোকলি রক্তে সুগারের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করে এবং ডায়াবেটিস প্রতিরোধ করতে সহায়তা করে। এবং ব্রোকলি আমাদের শরীরের ভিটামিন সি-এর ঘাটতি পূরণ করতে সহায়তা করে। তাই প্রতিদিনের সবজি তালিকায় রাখতে পারেন এই অত্যন্ত উপকারী সবজি।

পালং শাক- পালং শাক ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য অত্যন্ত উপকারী একটি শাক। এবং পালংশাক যে পুষ্টিগুণসমৃদ্ধ তা কাউকে বলে দিতে হয় না। কারণ পালং শাকের পুষ্টিগুণ আমাদের সকলেরই জানা রয়েছে। এবং ডায়াবেটিস রোগীদের ক্ষেত্রে পালং শাক খুব উপকারী একটি শাক। এবং সবুজ শাক সবজির মধ্যে পালংশাক সবচাইতে উপকারী ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য। তবে ঠিক সকল সময় পাওয়া যায় না। বিশেষ করে একটি শীতের সময় বেশি পাওয়া যায়। এসময় পালংশাক সকল ডায়াবেটিস রোগীদের খাওয়া উচিত।

অলিভ অয়েল– রান্নাবান্নার একটি অন্যতম উপাদান হচ্ছে তেল। প্রতিদিনের রান্নার কাজে আমরা সরিষার তেল বা সয়াবিন তেল ব্যবহার করে থাকি। আবার অনেকেই রাইস ব্রান অয়েল ব্যবহার করে থাকি এটিও স্বাস্থ্যের জন্য একটি ভালো উপাদান। সয়াবিন তেল আমাদের শরীরে কোলেস্টেরলের মাত্রা বৃদ্ধি করে এবং ডায়াবেটিস রোগীদের ক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরনের স্বাস্থ্যঝুঁকিতে সৃষ্টি করে। এ কারণেই অনেকে সয়াবিন তেলের বদলে সরিষার তেল বা রাইস ব্রান অয়েল রান্নার কাজে ব্যবহার করেন। তবে ডায়াবেটিস রোগীদের রান্নার ক্ষেত্রে অলিভ অয়েল ব্যবহার করা যেতে পারে। অলিভ অয়েল স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী। যা আমাদের দীর্ঘায়ু এবং সুস্থ জীবন নিশ্চিত করতে কাজ করে। এ কারণেই ডায়াবেটিস রোগীরা অলিভ অয়েল খেতে পারেন।

মিষ্টি আলু- আলু হচ্ছে এমন একটি সবজি যেটি মানুষ সবচাইতে বেশি খেয়ে থাকে। তবে ডায়াবেটিস রোগিদের ক্ষেত্রে মিষ্টি আলু খাওয়া উপকারী। আমরা প্রত্যেক দিনের খাদ্য যে সাদা আলু বা অন্যান্য আলু ব্যবহার করি ডায়াবেটিস রোগীরা এক্ষেত্রে মিষ্টি আলু ব্যবহার করতে পারেন। একদিকে যেমন সুস্বাদু অন্যদিকে বিভিন্ন পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ।

খেতে পারেন শিম বরবটি অথবা মটরশুটি- এ সকল খাদ্য অত্যন্ত স্বাস্থ্যকর এবং ফাইবার সমৃদ্ধ। ডায়াবেটিস রোগীদের ক্ষেত্রে ফাইবার জাতীয় খাদ্য অত্যন্ত উপকারী। তাই ডায়াবেটিস আক্রান্ত রোগীরা অবশ্যই শিম মটরশুঁটি এবং বরবটি প্রতিদিন খেতে না পারলেও অন্তত পক্ষে সপ্তাহে একদিন অবশ্যই খাবেন। কারণ এ সবজিগুলো প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন সমৃদ্ধ হয়। প্রাণিজ প্রোটিনের চাইতে শতগুণ বেশি স্বাস্থ্যসম্মত খাবার। এবং এসকল সবজিতে পরিমাণমতো কার্বোহাইড্রেট থাকে।

বাদাম- স্বাস্থ্যকর ফ্যাট এর জন্য বাদাম একটি আদর্শ খাদ্য। এবং বাদাম কতটা স্বাস্থ্যকর এবং স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী এ কথা কাউকে বলে দিতে হয় না। কারণ বাদামের পুষ্টিগুণ সম্বন্ধে আমরা সকলেই জানে। বাদামে রয়েছে স্বাস্থ্যকর ফ্যাট যা একজন ডায়াবেটিস রোগীর জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বাদাম অনেক প্রকার হয়েছে আপনি যেকোন বাদাম খেতে পারেন তবে কাজুবাদামের সবচাইতে বেশি পরিমাণে পুষ্টিগুণ পাওয়া যায়। বাদামের রয়েছে যেসকল ফ্যাট তা আমাদের কোন  ক্ষতি সাধন করে না।বরং স্বাস্থকর ফ্যাটের জন্য নিয়মিত বাদাম খান।

টক দই- প্রতিদিন কম পক্ষে একবার টক দই খেলে  টাইপ-২ ডায়াবেটিস হওয়ার ঝুঁকি অনেক অংশে কমে যায়। এছাড়াও নিয়মিত টক দই খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুললে টাইপ-২ ডায়াবেটিস হওয়ার সম্ভাবনা আঠারো শতাংশ পর্যন্ত কম যায়। এছাড়া টক দইয়ে কার্বো হাইড্রেটের পরিমাণ কম থাকে। টক দই আমাদের হজম শক্তি বাড়ায়।

দারুচিনি- দারুচিনি হলো একটি মসলা যা সকল খাবারের স্বাদ বর্ধক হিসেবে ব্যাবহার করা যায়। এবং এর সব থেকে ভালো একটি গুণ হলো, মিষ্টি কোন কিছু তৈরি করার সময়ে এটি চিনির বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন। এছাড়াও দারুচিনি আপনার ক্ষুধা দমন করতেও সাহায্য করবে। গবেষণা থেকে জানা যায়, দারুচিনি ব্লাডসুগারের পরিমান কমাতে ও বেশ সহযোগী।

চা- এটি একটি জনপ্রিয় পানিয়। এটি পান করলে ক্লান্তি ভাব দুর হয়।এবং শরীর চাঙ্গা করে। চা এ আছে  প্রচুর পরিমাণ অ্যান্টি অক্সিডেন্ট। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই  ডাক্তাররা নিয়মিত লাল চা এবং গ্রিন টি খাওয়া পরামর্শ দেন। তবে ডায়বেটিস রোগিদের ক্ষেত্রে অবশ্যই এই দুই ধরনের চা চিনি ছাড়া হতে হবে।এবং দুধ চা খাওয়া বর্জন করতে হবে।

উপরোক্ত খাবার গুলো ডায়াবেটিস রোগিদের ক্ষেত্রে আদর্শ খাদ্য। এসকল খাবার ডায়াবেটিস রোগীকে রাখবে সুস্থ ও সবল।তাই সকল ডায়াবেটিস রোগীর উচিত সঠিক খাদ্য তালিকা মেনে খাবার খাওয়া।