বারমুডা ট্রায়াঙ্গলের রহস্য | রহস্যময় বারমুড ট্রায়াঙ্গল ।
এই বিশাল পৃথিবীর আমরা কতটুকুই বা জানি এই পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে বহু রহস্যময় স্থান এবং রহস্যময় বস্তু। এসকল রহস্য আজ পর্যন্ত কেউ উদঘাটন করতে পারেনি এবং এই রহস্য কেউ কোন সঠিক সমাধান দিতে পারেনি।এই পৃথিবীতে রয়েছে রহস্যময় মানুষ,মহাকাশের রহস্যময় ঘটনা,ভৌতিক রহস্যময় ঘটনা,রহস্যময় সত্য ঘটনা ছাড়াও আরো কত কি।আজকের বিষয় বারমুডা ট্রায়াঙ্গেলের রহস্যময় কাহিনী।
আমরা মানুষ আর মানুষের স্বাভাবিক প্রবৃত্তিই হলো রহস্যের অনুসন্ধান করা। অনেকেই রয়েছে যারা এই রহস্য অনুসন্ধানের জন্য তাকে সারা জীবন ব্যয় করে দেয়। তারা অনেক রহস্যের পেছনে সত্যকে উদঘাটন করতে পেরেছে। আবার তাদের এই রহস্য উদঘাটন করতে গিয়ে বেরিয়ে এসেছে নতুন নতুন আরো অনেক রহস্য সেগুলোর সমাধান তারা কখনোই বের করতে পারেনি।
এরকম একটি রহস্যময় স্থান হচ্ছে বারমুডা ট্রায়াঙ্গেল। এই বারমুডা ট্রায়াঙ্গল নিয়ে বিভিন্ন রহস্যময় ঘটনা এবং গল্প কাহিনি রয়েছে। রচিত হয়েছে বিভিন্ন রহস্য ঘেরা কল্পকথা। এই বারমুডা ট্রায়াঙ্গেল মূলত এমন একটি স্থান যেখানে কেউ কোন জাহাজ বা বিমান নিয়ে গেলে কখনোই ফিরে আসতে পারে না। এটি আটলান্টিক মহাসাগরের একটি বিশেষ ত্রিভুজাকৃতির অঞ্চল। এখানে বহু বহু জাহাজ এবং বিমান হারিয়ে গিয়েছে তার কোন খোজ আজ পর্যন্ত পাওয়া যায় নাই। এবং কোন কারনে এরকম হয়েছে তাও কেউ বলতে পারেনা। এ কারণে এই জায়গাটিকে শয়তানের ট্রাঙ্গেল বা শয়তানের ত্রিভূজও বলা হয়।
এখানে অনেক জাহাজ এবং বিমান হারিয়ে যাওয়া ছাড়াও আরো অনেক রহস্যময় ঘটনা ঘটেছে বলে শোনা যায় । এখানে যখন নাবিকরা জাহাজ নিয়ে পৌঁছে ঠিক তখন আর তাদের কম্পাস ঠিকমত কাজ করেনা।কম্পাস ভুল দিক নির্দেশনা দিয়ে থাকে। এবং এ কারণেই অনেক নাবিক এবং বিমান চালক দিক হারিয়ে যায় বলে অনেকেই ধারণা করে থাকে। অনেকেই মনে করেন এখানে মহা-জাগতিক শক্তির প্রভাব রয়েছে যার কারনে এমন অদ্ভুত ঘটনা ঘটে থাকে। এছাড়াও অন্য গ্রহের প্রাণী বা এলিয়েনের দাঁড়াও এ সকল দুর্ঘটনা হয় বলে অনেকেই মনে করে থাকে ।
সর্ব প্রথম বারমুডা ট্রায়াঙ্গেলের কথা বর্ণনা করেন করেন ক্রিস্টোফার কলম্বাস । তিনি বলেছেন এখানে যখন তাদের জাহাজ পৌঁছে ঠিক তখন তার জাহাজের সকল নাবিকরা বিভিন্ন রহস্যময় ঘটনার সাক্ষী হয়।তারা দিগন্তে আলোর অদ্ভুত নাচানাচি দেখতে পায়।এ ছাড়াও তারা আরো দেখতে পেল বিশাল ধোঁয়ার কুন্ডলী ও তাদের দিকনির্দেশনা কাজে ব্যাবহৃত কম্পাস সঠিকভাবে কিক নির্ণয় করতে পারছিল না। এরপর থেকেই মানুষের মনে এই রহস্য প্রকট আকারে বাসা বাধতে থাকে।এবং খুবই দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে বারমুডা ট্রায়াংগেল এর রহস্য ঘেরা গল্প।
বারমুডা সম্পর্কে আমরা যেসকল রহস্য জানি তা আসলেই সত্য অথবা এই সকল গল্পের ভিত্তিই বা কি। এটি শুধু-মাত্র একটা গল্প কথা নয় তো? আসুন তাহলে বারমুডা ট্রায়াঙ্গেল রহস্যের সত্যতা যাচাই করি। এটি কি সত্যি অতি-প্রাকৃতিক রহস্যময় শক্তি সম্পন্ন স্থান নাকি শুধু মানুষের মুখরোচক গল্প । এই অতি প্রাকৃতিক রহস্যময় ঘটনার সত্যতাই বা রয়েছে কতটুকু। আসুন জেনে নেই এই সময় ঘটনার পেছনের আসল সত্য।
প্রতিনিয়তই অনেক বিমান বিধ্বস্ত হওয়া এবং জাহাজ ডুবে যাওয়ার ঘটনা ঘটে থাকে পৃথিবীতে । এ সকল ঘটে থাকে বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে। একই ভাবে বারমুডা ট্রায়াঙ্গেল এর ঘটনা গুলোও এর ব্যতিক্রম নয়। এখানেও প্রাকৃতিক দুর্যোগ এবং অন্যান্য দুর্ঘটনা যে সকল কারণে ঘটে থাকে সেই একই কারণে ঘটে থাকে বলে সবাই মনে করে। অনেকেই মনে করে এটি শুধুমাত্র কল্প কাহিনী ছাড়া আর কিছুই নয়। এগুলো শুধুমাত্র মানুষের দ্বারা ছড়ানো গুজব। অন্যান্য অনেক কারণ রয়েছে এই বারমুডা ট্রায়াঙ্গেল রহস্য সৃষ্টির পিছনে।
আমরা সকলেই জানি মানুষের ভিতরে রহস্য উদ-ঘাটনের একটি বিশাল তৃষ্ণা কাজ করে সর্বদা। যেই বিষয়টি পুঁজি করে অনেকেই ব্যবসা করছেন। এবং রাতারাতি বড়লোক হয়ে গিয়েছে । বারমুডা ট্রায়াঙ্গেল রহস্য এর ব্যতিক্রম নয় বলে বর্তমানে এসকল তথ্য বেড়িয়ে আসছে । কারণ আমরা সকলেই জানি নতুন কোনো রহস্য নিয়ে যদি কোন বই লেখা হয় তাহলে প্রচুর পরিমাণে পাঠক বইটি কিনতে আগ্রহী হবে।এবং বইটি তারা ক্রয় করবে।যার ফলে প্রচুর টাকা রোজগার হবে। এছাড়াও এসকল রহস্যময় বিষয় নিয়ে টিভি তে অনুষ্ঠান করে প্রচুর পরিমাণে অর্থ আয় করা সম্ভব। আর এ কারণেই মূলত বারমুডা ট্রায়াঙ্গলের রহস্য ছড়ানো হয়েছিল। এবং সে সময় কালে এই নিয়ে বিভিন্ন বই রচনা করা হয়েছিল বিভিন্ন লেখকের। যেখানে যেকটি বিষয় দেখা যায় সেখানে লেখক তাদের মনের মাধুরী মিশিয়ে এই রহস্য বর্ণনা করেছেন। এসকল লেখার ভিতরেও অনেক অনেক ভিন্নতা দেখা যায়। যার একে অপরের তথ্যের মধ্যে বিশাল ব্যাবধান তৈরি করে।
এই অঞ্চলটি দিয়ে সেই সময় প্রচুর পরিমাণ বাণিজ্য জাহাজ আসা যাওয়া করত। এবং প্রায়ই এই অঞ্চলে জল-দস্যুদের হামলা হতো। জল-দস্যুরা এই সকল জাহাজের মালা-মাল লুট করার পরে এই জাহাজ গুলোকে ডুবিয়ে ফেলতো। কারন এর থেকে বোঝার উপায় ছিল না যে আসলে এটি জল-দস্যুদের আক্রমণের শিকার হইছে নাকি ডুবে গিয়েছিল।
এছাড়াও অনেক জাহাজ মালিকরা এখানে তাদের পুরনো জাহাজ গুলো বিমার টাকা উসুলের আসায় ইচ্ছা-কৃত ভাবে ডুবিয়ে দিয়েছে। এবং এই রহস্যকে পুজি করে বিমা কোম্পানির থেকে প্রচুর পরিমাণে অর্থ আদায় করত জাহাজ মালিকরা।যদিও পরবর্তী কালে তদন্তের মাধ্যমে এইসব সত্যি কাহিনি প্রকাশ পেয়েছে ।
গবেষকরা ক্রিস্টোফার কলম্বাস যে দেখা ঘটনার বর্ননা দিয়েছে তার ব্যাখা দিতে গিয়ে বলছেন, স্থানীয় জন-গোষ্ঠীর ব্যবহৃত নৌকায় রান্নার-বান্নার কাজে ব্যবহৃত আগুন দেখেই নাবিকেরা যে আলো দেখেছেন তার কথা বলেছে, আর ভৌগোলিক অবস্থান এবং নক্ষত্রের অবস্থান পরিবর্তনের কারণে কম্পাসে সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে।
এটি গ্রীষ্ম মন্ডলীয় অঞ্চলে অবস্থিত হওয়ার কারনে এখানে প্রায় সময়ই প্রবল ঘূর্ণিঝড়ের মত প্রাকৃতিক দূর্যোগ আঘাত হানে। এর ফলে প্রচুর পরিমাণ দূর্ঘটনাও হয়ে থাকে এই অঞ্চলে। কিন্তু এসকল ঘূর্ণি ঝড়ের কথা প্রায় সকল লেখকই এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছে তাদের লেখনিতে। এবং এখানে দূর্ঘটনার শিকার হওয়া জাহাজ এবং বিমান পরবর্তীতে খুজে পাওয়া গিয়ে থাকলেও তার সম্পর্কে অনেক সময় প্রকাশ করা হয় নাই বলে মনে করেন সবাই।
এর থেকে এটাই প্রমানিত হয় যে, বারমুডা ট্রায়াঙ্গলের ঘটনা যতটা না রহস্যময় তার চেয়ে মানুষ এটিকে আরো বেশি রহস্যময় রোমাঞ্চিত করে তুলেছে। এগুলো করেছে কেউ তাদের ব্যক্তিগত স্বার্থে আবার অনেকটা গুজবের কারনে।