ডায়াবেটিকসের আদ্যপান্ত ।কী,কেন এবং কিভাবে মুক্তি পাবেন?
ডায়াবেটিস হলো এমন একটি ব্যাধি যা একবার কারো শরীরে বাসা বাধলে তাকে সারাজীবন বয়ে বেড়াতে হয়। ডায়াবেটিস হলে রোগীর মৃত্যু ঝুঁকি না থাকলেও কিন্তু এটি আক্রান্ত ব্যক্তিকে ক্রমান্বয়ে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়। তবে নিয়মিত জীবন যাপন ডায়াবেটিস রোগীকে সুস্থ এবং সুন্দর ভাবে বাঁচতে সহায়তা করে।তবে ডায়াবেটিস রোগীদের সকল সময় ডাক্তারদের দেওয়া নিয়মকানুন মাফিক চলতে হয়।অনিয়মিত জীবনযাপন একজন ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য শুভ ফলদায়ক নয়।আসুন জেনে নেই ডায়বেটিস কি, কত প্রকার,এর পূর্ব লক্ষন এবং ডায়বেটিস এর মাত্রা কত ও কিভাবে শনাক্ত করা যায় এই ডায়াবেটিস।
অনেকেই প্রশ্ন করে থাকে ডায়াবেটিস কত প্রকার। ডায়াবেটিস মূলত দুই প্রকার
১।টাইপ – ১ ডায়াবেটিস এবং
২। টাইপ – ২ ডায়াবেটিস।
মূলত সকল ডায়াবেটিস এক ধরনের হলেও এদের ভিতর কিছু পার্থক্য বিদ্যমান। যেমন আক্রান্ত ব্যক্তি,
রোগীর বয়স ও বিভিন্ন ক্ষেত্রে এর পার্থক্য দেখা যায়। টাইপ ১ ডায়াবেটিস যে কোন সময় হতে পারে। এবং এটি মূলত অল্প বয়সেই হয়ে থাকে। এবং টাইপ ১ ডায়াবেটিস আক্রান্ত ব্যক্তির নিয়মিত ইনসুলিন গ্রহণ করা অত্যাবশ্যক। টাইপ ২ ডায়াবেটিস মূলত দেখা দেয় বয়স যখন ৪০ এর উপরে হয়ে যায় তখন থেকে। এবং এটি মূলত বংশ পরম্পরায় রোগী থেকে রোগীর ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে পৌঁছে। অর্থাৎ যদি আপনার পূর্বপুরুষের কারো টাইপ ২ ডায়াবেটিস থেকে থাকে তাহলে আপনারও টাইপ-টু ডায়াবেটিস হওয়ার ঝুঁকি ৮০ শতাংশের উপরে। এবং টাইপ টু ডায়াবেটিস আক্রান্ত ব্যক্তিকে ইনসুলিন গ্রহন না করলেও চলে। শুধুমাত্র খাওয়ার ঔষধ এর মাধ্যমে টাইপ টু ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। তবে ডায়াবেটিসের মাত্রা অতিরিক্ত মাত্রায় হয়ে গেলে তখন টাইপ ২ ডায়াবেটিস রোগের একমাত্র উপায় হচ্ছে ইনসুলিন গ্রহণ করা। টাইপ ২ ডায়াবেটিস রোগীকে নিয়মিত ব্যায়াম করার পরামর্শ দিয়ে থাকে ডাক্তাররা। নিয়মিত ব্যায়াম এবং নিয়মিত খাদ্যভ্যাসে পারে টাইপ টু ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে।
ডায়াবেটিস মূলত হয়ে থাকে আমাদের রক্তে অতিরিক্ত পরিমাণ সুগার বা গ্লুকোজ এর কারণে । যখন আমাদের শরীরে রক্তের সুগারের পরিমাণ অতিরিক্ত পরিমাণে বৃদ্ধি পেতে থাকে এবং আমাদের শরীর সেটি নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয় ঠিক তখনই ডায়াবেটিসের ঝুঁকি দেখা দেয়। এবং মানুষ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হয় । তবে আমাদের সকলের রক্তেই গ্লুকোজ রয়ছে যা আমাদের শরিরে তৈরি হওয়া এক বিশেষ ধরনের ইনসুলিন এর দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়ে থাকে। যখন আমাদের শরীর এই ইনসুলিন তৈরি করতে ব্যর্থ হয় তখন রক্তের গ্লুকোজ বৃদ্ধি পায়।
ডায়বেটিস রোগের কিছু পূর্ব লক্ষন রয়েছে । এ সকল লক্ষন দেখা দিলে বুঝতে হবে হয়তো ডায়বেটিসে আক্রান্ত হয়েছেন।এসকল লক্ষনের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি লক্ষন হলো ঘন ঘন প্রস্রাব হওয়া।একটি মানুষ দৈনিক ৩ থেকে ৫ বারের মত মূত্র ত্যাগ করে থাকে।কিন্তু কোন ব্যক্তির ডায়বেটিস দেখা দিলে ঘন ঘন প্রস্রাবের সমস্যা দেখা দেয়।
এছাড়াও ডায়বেটিস রোগীদের অন্যতম আরেকটি লক্ষন হলো বার বার পানি পিপাসা লাগা।অতিরিক্ত পরিমাণে পানি পিপাসা লাগার প্রধান কারণ হচ্ছে বারবার প্রস্রাব হওয়ার কারণে শরীর থেকে প্রচুর পরিমাণে পানি বের হয়ে যায়। এবং শরীরে পানির ঘাটতি দেখা দেয়। একারনেই বারবার পানির পিপাসা লাগে। এবং গলা শুকিয়ে যায়। তাই একজন ডায়াবেটিস রোগের পূর্ব লক্ষণ হিসেবে বারবার পানি পিপাসা এবং গলা শুকিয়ে যাওয়ার মতো সমস্যা দেখা দেয়।
ডায়াবেটিসের অন্যতম আরেকটি লক্ষণ হচ্ছে অতিরিক্ত পরিমাণে ক্ষুধা লাগা। কারণ ডায়াবেটিস রোগ হলে শরীর শর্করা ধরে রাখতে পারে না। এবং এর ফলে প্রচুর পরিমাণে শর্করার চাহিদা দেখা দেয়। আমাদের শক্তি যোগাতে শর্করা কাজে লাগে। তাই শরীর দুর্বল হয়ে যায়। এবং এই শর্করার চাহিদা পূরণের জন্য বারবার ক্ষুধা লাগে।
এবং ক্লান্তি ও অবসাদ গ্রস্থ ভাব দেখা দেয়। শরীর যেহেতু ডায়াবেটিস হওয়ার কারণে শরীর শর্করা ধরে রাখতে পারছে না। এর ফলে শরীরে শর্করার ঘাটতি দেখা দিচ্ছে। এবং শরীর দুর্বল হয়ে পড়ে এর ফলস্বরূপ ক্লান্তি এবং অবসাদগ্রস্ত ভাব সৃষ্টি হয়।
শরীরে অসারতা দেখা দিতে পারে। কারণ শরীরে অতিরিক্ত গ্লুকোজ এর কারণে স্নায়ু দুর্বলতা সৃষ্টি হয়। এবং হাত-পায়ে অসার বোধ হয়। এছাড়াও এর ফলে ব্লাড প্রেসার লো হয়ে যাওয়ার কারণে মাথা ঘোরাতে পারে।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হ্রাস পায় এবং এ কারণে বারবার অসুস্থ হয়ে পড়ার মতো সমস্যা দেখা দেয়। এছাড়াও রক্তে অতিরিক্ত পরিমাণ গ্লুকোজের কারণে কাটা-ছেঁড়া শুকাতে প্রচুর পরিমানে সময় নেয় এবং সহজে ভালো হতে চায় না। এছাড়াও ডায়াবেটিসের কারণে দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে যেতে পারে বা চোখে কম দেখার মত সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে।
ডায়বেটিস হওয়ার কারণে ত্বক খসখসে হয়ে যায়। এবং চুলকানি ভাব দেখা দিতে পারে। কারণ বার বার প্রস্রাব করার কারণে শরীর থেকে প্রচুর পরিমাণে পানি বের হয়ে যায়। এবং ত্বক তার স্বাভাবিক আর্দ্রতা হারিয়ে ফেলে।
কিভাবে পরিক্ষা করবেন ডায়বেটিস হয়েছে কি না-
ডায়াবেটিস আক্রান্ত হয়েছেন কিনা তা জানতে খাবারের আগে এবং পরে রক্তের গ্লুকোজ পরীক্ষা করতে হয় । যদি খাবার আগে রক্তের গ্লুকোজের পরিমাণ 3.5 mmol/l
এবং খাবারের পরে 5.5 mmol/l এর বেশি থাকে তাহলে ধরে নিতে হবে উক্ত ব্যক্তি ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। এবং এই মাত্রাটি হলো একজন ডায়বেটিস মুক্ত ব্যক্তির রক্তের গ্লুকোজের পরিমান।
টাইপ ১ ডায়াবেটিস এর ক্ষেত্রে শিশুদের ডায়াবেটিসের মাত্রা হলো জেগে থাকা অবস্থায় 4.7 mmol/l এবং খাবার গ্রহণের আগে 4.7 mmol/l এবং খাবার গ্রহণের দুই ঘন্টা পরে 5.9 mmol/l.
প্রাপ্ত বয়স্কদের ক্ষেত্রে টাইপ ১ ডায়াবেটিস এর মাত্রা হলো জেগে থাকা অবস্থায় 5.7mmol/l. খাবার গ্রহণের আগে 4.7mmol/l এবং খাবার গ্রহণের দু’ঘণ্টা পরে 5.9mmol/l.
টাইপ ২ ডায়াবেটিসের মাত্রা হলো খাবার গ্রহণের পূর্বে 4.7mmol/l এবং আহার গ্রহণের দুই ঘন্টা পরে 8.5mmol/l এর বেশি।
এছাড়াও গর্ভবতী মহিলাদের ক্ষেত্রে যাদের ডায়াবেটিস রয়েছে তাদের রক্তের গ্লুকোজের মাত্রা হলো৷ জেগে থাকা অবস্থায় 5.3mmol/l এর বেশি। এবং খাবার গ্রহণের পূর্বে 5.3 mmol/l এর বেশি। খাবার গ্রহণের একঘন্টা পরে 7.8 mmol/l এর বেশি এবং খাবার গ্রহণের দুই ঘন্টা পরে 6.4mmol/l এর বেশি।
একজন ডায়াবেটিস রোগের জন্য প্রতি তিন মাস অন্তর অন্তর ডায়াবেটিস পরীক্ষা করা উচিত।
একজন ডায়াবেটিস রোগী চারটি বিষয়ে সচেতনতার মাধ্যমে সুস্থ ও সুন্দর জীবনযাপন নিশ্চিত করতে পারে –
১- নিয়ম মাফিক খাদ্যভ্যাস।
২- ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ঔষধ সেবা।
৩ – প্রতিটি পদক্ষেপে সাবধানতা অবলম্বন।
৪- নিয়মিত ব্যায়াম করা ও হাঁটার অভ্যাস তৈরি।