করোনা ভাইরাসের বিষয়ে পরামর্শ : করোনা ভাইরাস রেসপেরটরি ড্রপলেট কতদূর যেতে পারে
করোনা ভাইরাস বর্তমান বিশ্বের সকল মানুষের জন্য এক ত্রাসের বিষয়। সবকিছুর শীর্ষে, সব মানুষের চিন্তার কারন হচ্ছে এই ভাইরাস। করোনা ভাইরাস আক্রান্ত মানুষের মৃত্যুর হার দিন দিন বেড়েই চলেছে। এমতাবস্থায় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ না নিলে রোগের হাত থেকে রেহাই পাওয়া কঠিন হয়ে যাবে।
এই ভাইরাস ড্রপলেটের মাধ্যমে খুব দ্রুত ছড়ায়। তাই স্বাস্থ্যবিদ গন সামাজিক দূরত্ব মেনে চলার নির্দেশ দিয়েছেন।
ড্রপলেট কি???
ভাইরাস বা জীবাণু বাতাসের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়াই হচ্ছে মূলত ড্রপলেট।এই ড্রপলেট হাচি কাশি, কফ, থু থু, মলমূত্র এর মাধ্যমে ছড়ায়। ড্রপলেট এর আকার এক থেকে পাঁচ মাইক্রোমিটার পর্যন্ত হতে পারে। করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত মানুষের হাচি কাশিতে রয়েছে অসংখ্য জীবানু। এ জীবানু বাতাসে ছড়িয়ে পড়ে। সুস্থ ব্যক্তি তার শ্বাসপ্রশ্বাস এর সাথে বাতাসের জন্য জীবানু গ্রহণ করে। এর এভাবেই কোভিড ১৯ মানবদেহে প্রবেশ করে।
করোনা ভাইরাসের
বিষয়ে পরামর্শ – করোনা ভাইরাস কীভাবে ছড়ায়???
বিবিসি মাধ্যমের এক সংবাদে জানা যায় বিজ্ঞানীরা বলেছেন, একবার হাচি কাশির মাধ্যমে প্রায় তিন হাজার
জীবানু বাতাসে ছড়িয়ে পড়তে পারে। এ কনাগুলো উপযুক্ত পরিবেশে প্রায় ৮ঘন্টা পর্যন্ত
বেচে থাকতে পারে। বাতাসের মাধ্যমে তা বিভিন্ন দ্রব্যাদির যেমন জামা কাপড়, খাবার
দাবার, আসবাবপত্র এসব এর উপর জমা হয়।
আমেরিকায় সেন্ট্রার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল বলেছে, কোনো কিছুতে ভাইরাস লেগে থাকাকালিন
যদি কেউ তা স্পর্শ করে এরপর মুখে হাত দেয় তবে সে সহজেই ওই রোগে আক্রান্ত হতে পারে।
কোভিড -১৯ মলমূত্রের মধ্যে অনেকক্ষন বেচে থাকতে পারে। তাই বাথরুম থেকে বের হয়ে এসে
সাবান দিয়ে হাত না ধুলে রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।
গবেষকরা বলেছেন, ভাইরাসটি হাতল, প্লাস্টিক, আসবাবপত্র এসবের উপর পড়লে অনেক ক্ষন
বেচে থাকতে পারে। বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, কোনো কাজ করার পর সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে রোগের
সংক্রামন এড়ানো যায়। সাথে সাথে এসব জিনিস পত্র গুলো ব্যবহারের পর পরই জীবাণুমুক্ত
করার ব্যবস্থা করতে হবে।
করোনা ভাইরাসের বিষয়ে পরামর্শ – করোনাভাইরাসের আয়ুকাল::
আমেরিকার ন্যাশনাল হেলথ ইন্সটিটিউট এর ভাইরোলজিস্ট ফান ডোরমালেন ভাইরাস এর বেচে থাকা নিয়ে গবেষনা করেছেন।
এ ভাইরাস কতদিন বেচে থাকতে পারে তা নির্ভর
করে কোন ধরনের বস্তুর উপর তা রয়েছে।
সাধারণত ধাতব দ্রব্যাদি, কপারের জিনিস, প্লাস্টিক এসবের উপর দীর্ঘক্ষন থাকতে পারে।
কপারের কোনো জিনিসের উপর থাকলে এর মৃত্যু হতে প্রায় চার ঘন্টা সময় লাগে।
অনেকের মতে, এই ভাইরাস দীর্ঘ আট ঘন্টা পর্যন্ত বাতাসে থাকতে পারে।এ ব্যাপারে এখনো
গবেষনা অব্যাহত রয়েছে।
করোনা ভাইরাসের বিষয়ে পরামর্শ – করোনা ভাইরাসের বিষয়ে কী করনীয়???
⭕রাস্তায় চলাফেরা করার সময় একে অপরের থেকে কমপক্ষে ১ থেকে ২মিটার অথবা ৩ ফিট থেকে ৬ ফিট দূরত্ব বজায় রাখতে হবে।
⭕করোনা ভাইরাস উচ্চ তাপমাত্রায় বাচতে পারেনা। এজন্য খাবার দাবার অধিক তাপমাত্রায় রান্না করে খেতে হবে।
⭕এই ভাইরাসকে এক মিনিটে নিষ্ক্রিয় করে ফেলা যায়।৬২ – ৭১ শতাংশ অ্যালকোহল মিশ্রিত তরল দিয়ে সহজেই জীবাণুমুক্ত করা যায়।
⭕বাইরে গেলে বিশেষ করে জন সমাগমে ফেইস মাস্ক ব্যবহার করতে হবে।
⭕হাঁচি কাশি কফ থু থু রাস্তায় যেখানে সেখানে ফেলা যাবে না। হাঁচি দেয়ার সময় রুমাল ব্যবহার করতে হবে। কনুই দিয়ে নাক ঢেকে নিতে হবে।
রুমাল টিস্যু সঠিকভাবে ডিসপোজাল করতে হবে।
⭕ ব্লিচিং পাউডার দিয়ে করোনা ভাইরাস জীবাণুমুক্ত করা যেতে পারে। এজন্য বাসা বাড়িতে ঘর মোছার সময় পানির সাথে পাউডার বা জীবাণুনাশক মিশিয়ে নিতে হবে। এতে করে সংক্রমনের ঝুকি কমবে।
⭕বাইরে থেকে আসার পর হাত ধোয়ার অভ্যাস করতে হবে।অন্তত ২০ সেকেন্ড ধরে হাত ধুতে হবে।
⭕হ্যান্ড স্যানিটাইজার সাথে রাখতে হবে। কাজ করার পর হাত স্যানিটাইজার দিয়ে পরিষ্কার করে নিতে হবে।
⭕বার বার নাকে মুখে হাত দেয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। বিশেষ করে ময়লা জিনিস পত্র ধরার পর অবশ্যই হাত ধুতে হবে।
করোনা ভাইরাসের বিষয়ে পরামর্শ – ফেইস মাস্ক সঠিক ভাবে ব্যবহারের নিয়ম ::
⭕বাজারে বিভিন্ন
ধরনের মাস্ক বর্তমানে পাওয়া যাচ্ছে। তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, এসকল মাস্কের মধ্যে N95 গ্রেডের মাস্কই বেশি উপযোগী। এই মাস্ক জীবানু,
ভাইরাস এসব প্রতিরোধ করতে সক্ষম।
⭕এসব মাস্ক গুলো
অবশ্যই CDC এবং NIOSH কর্তৃক
অনুমোদিত হতে হবে।
⭕মাস্ক ব্যবহারের
আগে অবশ্যই হাত ধুয়ে নিতে হবে। চোখে মুখে ময়লা থাকলে মাস্ক পরেও লাভ নেই।
⭕বেশিক্ষণ মাস্ক
পরে থাকলে অক্সিজেনের ঘাটতি
দেখা যায়। এজন্য একাকী থাকাকালীন মাস্ক ব্যবহার না করাই ভালো।
⭕একই মাস্ক কয়েক জন
মিলে ব্যবহার করা থেকে বিরত
থাকতে হবে।
⭕অনেকে মাস্কের
বদলে ওড়না, নেকাব এসব ব্যবহার করেন। রোগ প্রতিরোধ করার ক্ষেত্রে এদের কোনো ভূমিকা
নেই উল্টো এগুলো শরীরে রোগ জীবানু সৃষ্টির পরিবেশ তৈরি করে।
⭕মাস্ক গুলো
শ্বাসপ্রশ্বাস এ বাধা দান করে তাই অনেক সময় হার্টের রোগিদের হার্ট ফেইলিয়র হওয়ার
আশংকা থাকে।
⭕এক লেয়ারের অনেক
মাস্ক বাজারে পাওয়া যায়। ওগুলো ব্যবহার না করাই ভালো। এতে ধুলাবালি আটকানো গেলেও
জীবানু প্রতিরোধ সম্ভব না।
⭕করোনা রোগির
সংস্পর্শ এ গেলে মাস্কের পাশাপাশি ফেইস শীল্ড ও ব্যবহার করতে হবে।
করোনা ভাইরাস – পি পি
ই ::
পারসোনাল প্রোটেকটিভ ইকুইপমেন্ট বা ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জামকে সংক্ষেপে বলা হয়
পি পি ই।
আমেরিকার এন এইচ এস প্রতিষ্ঠান পিপিই সম্পর্কে বলেছেন, করোনা ভাইরাসের জন্য যে
পিপিই তৈরি করা হচ্ছে সেটি অবশ্যই নাক, মুখ ও চোখ রক্ষা করবে।
সংক্রমিত হওয়ার সম্ভাবনা আছে এমন জায়গায় পিপিই পরা আবশ্যক। মূলত স্বাস্থ্য কর্মী
এবং চিকিৎসকরা এটি ব্যবহার করে থাকেন।
সাধারণত পাঁচটি উপকরন নিয়ে পিপিই হয় :
১.গাউন
২.গ্লাভস
৩.ফেস শীল্ড
৪.চশমা
৫.মাস্ক
মূলত রোগিদের সেবা প্রদান কালেই এটি ব্যবহার করা হ্য়। তবে এটা শুধু একবার
ব্যবহারের উপযুক্ত। কাজ শেষে অবশ্যই যথাযথ ভাবে অপসারনের ব্যবস্থা করতে হবে।
নকল পিপিই ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকতে হবে।
করোনা ভাইরাসের বিষয়ে পরামর্শ- সামাজিক বিধি নিষেধ ::
⭕যেহেতু রোগের আক্রান্ত রোগির হার বেড়েই চলেছে তাই এ অবস্থায় অযথা বাইরে ঘোরাঘুরি থেকে বিরত থাকতে হবে। করমর্দন, কোলাকুলি, হাত মেলানো থেকে দূরে থাকতে হবে।
⭕বাস টার্মিনাল, লঞ্চঘাট, রেল স্টেশন এসব জায়গায় জন সমাগম থেকে দূরে থাকতে হবে। অযথা ভীড় করা যাবে না। বাস গুলো তে প্রতি দুই সীটে একজন এই নিয়ম মেনে বসতে হবে।
⭕কারো মধ্যে রোগের লক্ষন দেখা দিলে তাকে নিজ দায়িত্ব এ কোয়ারেন্টাইনে থাকতে হবে। পরিবারের অন্যান্য সদস্য থেকে দূরে থাকতে হবে।
⭕ডায়াবেটিস ও হাপানি রোগিদের বিশেষ সতর্কতা মেনে চলতে হবে। কারন তাদের আক্রান্ত হওয়ার ঝুকি তুলনামূলক ভাবে বেশি।
⭕ব্লাড প্রেসারের রোগিদের রক্তচাপ নিয়ন্ত্রনে রাখতে হবে।
⭕হাসপাতালে যাওয়ার সময় ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে যেতে হবে। প্রয়োজনীয় সুরক্ষা সরঞ্জামাদি নিয়ে যেতে হবে।
⭕আইসোলশনে থাকা রোগিরা যাতে ঘরের বাইরে না যায়, নিয়ম কানুন মেনে চলে এ বিষয়টি টেলিমেডিসিন সেবার মাধ্যমে নিশ্চিত হতে হবে।
⭕শারীরিক অসুস্থতা দেখা দিল এ অথবা টেলিমেডিসিন সেবা নিতে হবে।
⭕ঠান্ডা, গলা ব্যথা, সর্দি কাশি প্রভৃতি লক্ষন দেখা দিলে হটলাইনে কল দিতে হবে।
⭕রোগির সংক্রমনে আসার পর জামাকাপড় ভালো ভাবে ধুয়ে ফেলতে হবে।
⭕প্রয়োজনবোধে স্যাভলন দিয়ে ঘর মেঝে পরিষ্কার করতে হবে। দরজার হাতল, নব ও স্যাভলন দিয়ে মুছতে হবে।
শারীরিক সুস্থতার দিক এ খেয়াল রাখা, সুষম খাবার গ্রহন, নিয়মিত ব্যায়াম করা আর পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখার মাধ্যমেই এই রোগের বিরুদ্ধ এ প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তোলা সম্ভব। সামাজিক বিধি নিষেধ কঠোরভাবে মেনে চলার মাধ্যমেই রোগের মৃত্যুর হার কমানো সম্ভব হবে।
বিশেষজ্ঞদের সহায়তা নিয়ে প্রতিবেদনটি লিখেছে (” নওশিন মারজিয়া, মেডিকেল শিক্ষার্থী)
বিশেষজ্ঞদের সহায়তা নিয়ে প্রতিবেদনটি লিখেছে (” নওশিন মারজিয়া, মেডিকেল শিক্ষার্থী)
[…] […]
[…] বাঁচতে হলে জানতে হবে […]