গুগল কি? এর ইতিহাস । what is google?

গুগল কি? এর ইতিহাস what is google?

ইন্টারনেটে আমরা কোন বিষয়ে খুঁজতে হলে কখনোই কি কোন ওয়েব সাইট খুঁজে খুঁজে দেখি? সেই সাইটটিতে আপনার প্রয়োজনীয় বিষয়টি রয়েছে কিনা। না আমরা এখন আর এরকম করি না। এখন কোন বিষয়ে খুঁজতে হলে আমরা সরাসরি চলে যাই সার্চ ইঞ্জিনে। এবং সার্চ ইঞ্জিন এ গিয়ে আমাদের প্রয়োজনীয় বিষয়টি লিখে সার্চ করি। এবং সার্চ ইঞ্জিন সার্চ করা বিষয়ের উপর হাজার হাজার আর্টিকেল আমাদের সামনে উপস্থিত করে। সার্চ ইঞ্জিনের বাংলা হলো অনুসন্ধান যন্ত্র। আমরা এই অনুসন্ধান যন্ত্র বলতে কী বুঝি? সাধারণ ভাবে সার্চ ইঞ্জিন বা অনুসন্ধান যন্ত্র বলতে আমরা বুঝি যেখানে আমাদের প্রয়োজনীয় কিছু লিখে সার্চ করলে তার হাজার হাজার রেজাল্ট আমাদের সামনে অনুসন্ধান যন্ত্র হাজির করে। বর্তমানে পৃথিবীতে হাজারো অনুসন্ধান যন্ত্র বা সার্চ ইঞ্জিন রয়েছে।

বর্তমানে অনুসন্ধান যন্ত্র হিসেবে শীর্ষে রয়েছে ….

1.গুগোল

2.বিং সার্চ ইঞ্জিন,

3.ইয়াহু সার্চ ইঞ্জিন,

4.ডাকডাকগো সার্চ ইঞ্জিন

৫. পিপিলিকা (একমাত্র বাংলা-সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এটি বানিয়েছে)

এ সকল সার্চ  ইঞ্জিন সারা বিশ্বে সেবা প্রদান করে থাকে। এছাড়াও রয়েছে প্রতিটি দেশের অভ্যন্তরীণ অনুসন্ধান যন্ত্র যেগুলো শুধু মাত্র দেশের মানুষ ব্যবহার করে।এসকল সার্চ ইঞ্জিন ও ভালো মানের সেবা প্রদান করে থাকে।

তবে সার্চ ইঞ্জিন জগতে বর্তমান সময়ে আধিপত্য বিস্তার করেছে গুগল সার্চ ইঞ্জিন। গুগোল একটি বহুজাতিক কোম্পানি হলেও এর যাত্রা শুরু হয়েছিল সার্চ ইঞ্জিন দিয়ে। বর্তমান সময়ে সার্চ ইঞ্জিন বা অনুসন্ধান যন্ত্র হিসেবে মানুষ গুগোল কে চিনে। কাউকে যদি প্রশ্ন করা হয় যে সার্চ ইঞ্জিন কি? তাহলে তারা বলতেছে সার্চ ইঞ্জিন হলো গুগল। এর অর্থ হচ্ছে তারা সার্চ ইঞ্জিন বলতে শুধু মাত্র গুগোল কে চিনেন। এটিকে যে আলাদা সংজ্ঞায় সংজ্ঞায়িত করা যায় একথা অনেকে জানেই না। বর্তমানে সার্চ ইঞ্জিন এর জগতে আধিপত্য বিস্তার করেছে গুগল। গুগলের অত্যাধুনিক প্রযুক্তি অন্যান্য অনুসন্ধান যন্ত্র কে পিছনে ফেলে দিয়েছে। কিন্তু কিভাবে তৈরি হলো এই গুগল। কে এর প্রতিষ্ঠাতা । কিভাবে যাত্রা শুরু হলো গুগলের এবং বর্তমান পর্যায়ে আসলো কিভাবে এগুলো কি আপনার জানতে ইচ্ছা করে না? যদি আপনার ভিতরে তা জানার আগ্রহ থাকে তাহলে যত্নসহকারে আর্টিকেলটি পড়ুন আশা করি সমস্ত বিষয়ে জানতে পারবেন।

গুগোলকে বহুজাতিক কোম্পানি এবং সুপ্রতিষ্ঠিত একটি প্রতিষ্ঠান হিসেবে বর্তমানে দেখা গেলেও পূর্বে কিন্তু এমনটা ছিল না। গুগোল প্রথম যাত্রা শুরু করেছিল তার সার্চ ইঞ্জিন কে দিয়ে। যা এখনো সগৌরবে চলতেছে। এবং বিশেষজ্ঞরা এমনও ধারণা করছে যে ভবিষ্যতে গুগলকে টেক্কা দিতে পারে এমন সার্চ ইঞ্জিন কি আসবে কখনো তা নিয়ে সন্দেহ আছে ।

গুগলের যাত্রা হয়েছিল ল্যারি পেজ এবং সার্গেই ব্রিন নামক দুই ব্যক্তির মাধ্যমে।

 সার্চ ইঞ্জিন তৈরি ছিল তাদের পড়াশোনার একটি এসাইনমেন্ট। তারা দুইজন ছিল ক্যালিফোর্নিয়ার স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের পিএইচডি ছাত্র। তাদের গবেষণা প্রকল্প হিসেবে একটি অনুসন্ধান যন্ত্র তৈরি করার দায়িত্ব পরে 1996 সালে। তবে অনুসন্ধান যন্ত্রটি তৈরি করতে হবে নতুন প্রক্রিয়ায়। যেখানে পূর্বের অনুসন্ধান যন্ত্রের প্রযুক্তি ব্যবহার করা যাবে না। একটি হবে সম্পূর্ণ নতুন প্রযুক্তির এবং যা একজন গ্রাহকদের সর্বোচ্চ মানের সেবা প্রদান নিশ্চিত করবেন এবং সবচাইতে তথ্য এবং উপযুক্ত রেজাল্ট দেখাতে সক্ষম হবে।

তারা দু’জন তাদের এই গবেষণা প্রকল্পের কাজ শুরু করেন। বলে রাখা ভালো গুগল তৈরি আগেকার অনুসন্ধান যন্ত্র গুলো কোন সার্চ করা বিষয়ের উপর তথ্য দেখাতো একটি নির্দিষ্ট বিষয়ের ভিত্তিতে। এগুলো হলো সার্চ করা পাতাটি কতবার সার্চ ইঞ্জিন এসেছে এবং কতজন গ্রাহক সেই তথ্যটি গ্রহণ করেছে। কিন্তু এই প্রক্রিয়ায় আপডেট তথ্য গ্রাহক পেত না। এ কারণেই এই নতুন সার্চ ইঞ্জিন তৈরি করার পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়।

ল্যারি পেজ এবং সার্গেই ব্রিন অবশেষে তাদের এই রিসার্চ প্রকল্পে সফল হয় এবং তারা নতুন একটি সার্চ ইঞ্জিন আবিষ্কার করতে সক্ষম হয়। যেটি তৎকালীন সময়ের সার্চ ইঞ্জিন থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন। এবং তাদের তৈরি সার্চ ইঞ্জিনটি বিভিন্ন ওয়েবসাইটের সাথে তথ্যের সমন্বয় সাধন এবং এ সকল ওয়েবসাইট এর ভিতরে সম্পর্ক বিশ্লেষণের মাধ্যমে সবচেয়ে উপযোগী ফলাফল প্রদর্শন করতে সক্ষম। এই উপায়টি কে তারা পেজরেঙ্ক(Page rank) বলে আখ্যায়িত করেন। এবং তারা দাবি করেন তাড়াতাড়ি প্রযুক্তি সার্চ ইঞ্জিন জগতে এক বিপ্লব সৃষ্টি করবে। এবং এটি হবে ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য একটি যুগোপযোগী অনুসন্ধান যন্ত্র।

প্রথম দিকে তাদের এই অনুসন্ধান যন্ত্রটি ক্যালিফোর্নিয়ার স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটির নিজস্ব ওয়েব সাইটে যুক্ত করা হয়। যার ওয়েব অ্যাড্রেস ছিল google.Stanford.edu এবং z.Stanford.edu  সর্বপ্রথম গুগলের নাম রাখা হয় “ব্যাকরাব” এই নামকরণ করার পেছনের কারণ হলো গুগোল কোন ওয়েবসাইট  কতটা গুরুত্বপূর্ণ তা যাচাই-বাছাই করার জন্য ওয়েবসাইট গুলোর ব্যাকলিংক বিশ্লেষণ করতে শুরু করলো।এবং ব্যাকলিংকে উপর ভিত্তি করে তথ্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ তা নির্নয় করে গুগল।

পরবর্তীতে এর নাম করা হয় গুগল। কিন্তু আপনারা শুনলে অবাক হবেন গুগোল নামটিও কিন্তু ভুল বানান থেকে এসেছে। মূলত যখন গুগলের নামকরণ করা হয় ভুল করে এর নাম রাখা হয় googol এবং এর থেকে Google নাম এসেছে।গুগল শব্দের অর্থগত অর্থ হলো প্রতিটি সংখ্যার পিছনে ১০০ টি শুন্য আছে। যার মানে হলো গুগল কোন সার্চ রেজাল্ট প্রদান করতে এত পরিমাণ তথ্য এ্যানালাইসিস করে সঠিক রেজাল্ট দেওয়ার জন্য।

গুগল কর্পোরেশন নামে সকলের সামনে আত্মপ্রকাশ করে ১৯৯৮ সালের ৪ সেপ্টেম্বর। এবং তাদের ওয়েব এড্রেস বা ডোমেইন রেজিঃ করা হয় ১৯৯৭ সালের  সেপ্টেম্বর মাসের ১৫ তারিখ (google.com)। এবং গুগলের মূল প্রতিষ্ঠানের নাম অ্যালফাবেট ইনকর্পোরেটেড ২০১৫ সাল থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত।এবং পূর্বের নাম ছিল গুগল ইনকর্পোরেটেড । এবং ২০১৯ সালে গুগলে কর্মী সংখ্যা ছিল ১,১৪,০৯৬ জন।

এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার নাম সুন্দর পিচাই এবং  রুঠ পোরাট রয়েছেন প্রধান অর্থনৈতিক কর্মকর্তার দায়িত্বে।

গুগলের সদর দপ্তর ১৬০০ এম্পিথিয়েটার পার্কওয়ে, মাউন্টেন ভিউ, ক্যালিফোর্নিয়া, যুক্তরাষ্ট্র।

বর্তমান গুগল শুধুমাত্র সার্চ ইঞ্জিনের ভিতরে সীমাবদ্ধ নেই।গুগল এখন বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানের রুপ নিয়েছে।এবং সফটওয়্যারের পাশাপাশি হার্ডওয়্যার নিয়েও ব্যবসা করে গুগল। বিভিন্ন ধরনের স্মার্ট ডিভাইস তৈরি করে গুগল। এছাড়া আপনার হাতের এন্ড্রয়েড স্মার্ট ফোনটির অপারেটিং সিস্টেমও কিন্তু গুগলের তৈরি। এটিকে আমরা এন্ড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেম নামে চিনি।এছাড়াও জিমেইল, গুগল ড্রাইভ, ব্লগার, গুগল ম্যাপ ইত্যাদি সকল কিছু গুগলের তৈরি।