ল্যাপটপ ব্যবহারের সঠিক নিয়ম
ল্যাপটপ আমাদের নিত্য প্রয়োজনীয় একটি ইলেকট্রনিক্স যন্ত্র । ল্যাপটপ হচ্ছে কম্পিউটারের একটি বহনযোগ্য রূপ। বর্তমান যুগ হচ্ছে বিজ্ঞানের যুগ। আর এই যুগের সব কিছুই বিজ্ঞান সম্মত উপায়ে সম্পন্ন হয়। আর এই বিজ্ঞানের যুগে অন্যতম একটি উপাদান হচ্ছে কম্পিউটার। শিক্ষা, চিকিৎসা, গবেষণা ইত্যাদি সকল কাজেই কম্পিউটারের ব্যবহার লক্ষণীয়। এবং এই কম্পিউটার ব্যবহারের মাত্রা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। আর এ কারণেই কম্পিউটারের বিভিন্ন বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসছে।
ল্যাপটপ হচ্ছে কম্পিউটারের বহনযোগ্য এবং যেকোনো জায়গায় ব্যবহার উপযোগী ভার্শন । সর্বপ্রথম ভাঁজ করা যায় এমন ল্যাপটপ আবিষ্কার হয়েছিল আশির দশকের প্রথম দিকে।
বর্তমানে ল্যাপটপের আকৃতিগত এবং ব্যবহারিক বৈশিষ্ট্যের আমূল পরিবর্তন সাধিত হয়েছে। এর ফলে তৈরি হয়েছে ল্যাপটপের বিভিন্ন ভার্সন। যেরকম নোটবুক, আল্ট্রাবুক, all-in-one ল্যাপটপ ইত্যাদি ইত্যাদি। এছাড়াও তৈরি হয়েছে টাচস্ক্রিন ল্যাপটপ।
সাধারণত একটি ল্যাপটপ তৈরি করা হয় ডিসপ্লে, কিবোর্ড এবং টাচপ্যাডের সমন্বয়ে। এবং একটি ল্যাপটপ ফুল চার্জ দিয়ে দুই থেকে 15-16 ঘন্টা পর্যন্ত চালানো যায়।
এটি একটি অতি সংবেদনশীল ইলেকট্রনিক যন্ত্র। যার কারণে ব্যবহারের ক্ষেত্রে আমাদের সচেতন হওয়া উচিত। আসুন তাহলে ল্যাপটপ ব্যবহারের সঠিক নিয়ম এবং এর কিভাবে যত্ন নিবেন তা জেনে নেই।
ল্যাপটপ অন অফ করার ক্ষেত্রে বিশেষ সর্তকতা অবলম্বন করতে হবে –
ল্যাপটপ অন অফ করার ক্ষেত্রে আমাদের বিশেষ সর্তকতা অবলম্বন করা উচিত। কারণ আমরা অনেকেই ল্যাপটপ ব্যবহার করার পরে তা সঠিক নিয়মে বন্ধ না করেই রেখে দেই। যার কারণে অতি গুরুত্বপূর্ণ এই যন্ত্রাংশটি খুব সহজেই নষ্ট হয়ে যেতে পারে। অনেকেই আছি যারা ল্যাপটপ ব্যাবহার করে ভাঁজ করে রেখে দেই। অফ না করে ভাজ করে রাখলে তা স্লিপ মুডে চলে যায়। যার ফলে ল্যাপটপটি সম্পূর্ণ রূপে বন্ধ হয় না। তাই অবশ্যই আমাদের ল্যাপটপের মেনু থেকে শাটডাউন করে তারপরে ল্যাপটপ ভাঁজ করে রাখা উচিত। এবং অন করার ক্ষেত্রে পাওয়ার বাটন ব্যবহার করুন।
ল্যাপটপ কোন অবস্থানে ব্যবহার করবেন-
ল্যাপটপ যেহেতু একটি পোর্টেবল ডিভাইস এ কারণে আমরা যেকোন স্থানে নিয়ে এটি ব্যবহার করতে পারি। আর এর ফলে যখন আমাদের কোন কাজ থাকে হুট করেই যেকোন স্থানে ল্যাপটপটি চালু করে ব্যাবহার করা শুরু করি। তবে এটি একদমই ঠিক নয়। ল্যাপটপ ব্যবহারের ক্ষেত্রে আমাদের সঠিক স্থান নির্বাচন করা খূবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। আমরা জানি ল্যাপটপের নিচে কুলিং ফ্যান থাকে যেটি ল্যাপটপ ব্যবহারের সময় উৎপন্ন তাপ বের করে দেয়। এবং এটিকে ঠান্ডা রাখে।একটিকে গরম হতে দেয় না এর ফলে ল্যাপটপ এর কার্যক্ষমতা অটুট থাকে। অনেক সময় দেখা যায় আমরা ব্যবহারের সময় বিছানা বা সমতল স্থানে নিয়ে কাজ করি। যা খুবই ক্ষতিকর একটি কাজ। কারণ বিছানায় তুলা বা ফোমের তোষক থাকে। যার উপরের ল্যাপটপ নিয়ে কাজ করলে ল্যাপটপের কুলিং ফ্যানের এরিয়াটা সম্পূর্ণ অবরুদ্ধ করে রাখে। এবং বাইরের ঠাণ্ডা হওয়া ভিতরে প্রবেশ করতে পারে না। অপর দিকে ভিতরের গরম হাওয়া ও বাইরে আসতে পারে না। যার ফলে প্রচন্ড গরম হয়ে যায় ল্যাপটপ। ফলে একদিকে যেমন ল্যাপটপ এর কার্য ক্ষমতা হ্রাস পায়। অপর দিকে এর আয়ু শূন্যের কোঠায় নেমে যেতে বেশি দিন সময় লাগে না। এ কারণে ল্যাপটপের নিচের অংশ দিয়ে যথেষ্ট পরিমাণে বায়ু চলাচল করতে পারে এ ব্যবস্থা করা উচিত।
এছাড়াও ধুলাবালি ও ময়লা যুক্ত স্থানে বসে কখনোই এটি ব্যবহার করা উচিত না। কারন ধুলাবালি যুক্ত যায়গায় এটি ব্যবহার করলে এটির কুলিং ফ্যান তা ভিতরে নিয়ে যাবে।এবং এর ভিতরের যন্ত্রাংশ গুলোতে ময়লা জমা হয়ে সাধের ল্যাপটপ নষ্ট হতে পারে।
ব্যবহারের সময় বিশেষ সর্তকতা-
আমরা ল্যাপটপ দিয়ে বিভিন্ন কাজ করে থাকি। এবং এর সকল কাজ করব অনেক সময় দেখা যায় অন্যান্য কাজের পাশা পাশি করা হয়ে থাকে। যার ফলে আমাদের হাতে বিভিন্ন ধরনের ময়লা, ধুলা, বালি, তেল অথবা পানি থাকতে পারে। যা ল্যাপটপ টিকে সম্পূর্ণ নষ্ট এবং কি বোর্ড নষ্ট করে দিতে পারে। তাই ল্যাপটপ ব্যবহারের সময় অবশ্যই হাত পরিষ্কার করে নিতে হবে এবং একসাথে ভেজা না থাকে বা তেল লেগে না থাকে সে বিষয়ে সর্তকতা অবলম্বন করুন।
একনাগাড়ে বেশি সময় কাজ করার ক্ষেত্রে সতর্কতাঃ-
আমাদের মাঝে অনেকেই আছে যারা একনাগারে ঘন্টার পর ঘন্টা ল্যাপটপের কাজ করেন। যার ফলে ল্যাপটপটি প্রচন্ড গরম হয়ে যায়। এসকল ক্ষেত্রে যদি আপনি ল্যাপটপ ব্যবহারের সঠিক নিয়ম অবলম্বন না করেন তাহলে আপনার অতি প্রয়োজনীয় এই ইলেকট্রনিকস যন্ত্রাংশ নষ্ট হতে বেশি সময় নেবে না। এ কারণে যারা অনেক সময় এক নাগাড়ে কাজ করেন তারা খেয়াল রাখবেন যেন ল্যাপটপের ভিতরে বায়ু চলাচল কোন বাধা সৃষ্টি না হয়। এছাড়াও ল্যাপটপ ঠান্ডা রাখার জন্য বাজারে অনেক ধরনের কুলিং ফ্যান পাওয়া যায়। এবং স্ট্যান্ড পাওয়া যায় যেগুলো ব্যবহার করলে ল্যাপটপের অতিরিক্ত তাপ দূর হবে। যার ফলে ল্যাপটপটি হবে দীর্ঘায়ু সম্পন্ন।
চার্জিং এর ক্ষেত্রে সর্তকতা-
আমরা অনেকেই ল্যাপটপ ফুল চার্জ হওয়ার জন্য সারারাত চার্জে দিয়ে রাখি। অনেকেই মনে করেন এতে ল্যাপটপের ব্যাটারি খুব তাড়াতাড়ি নষ্ট হয়ে যায়। কিন্তু বর্তমান সময়ে ল্যাপটপ চার্জিং এর ক্ষেত্রে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়। যার ফলে ল্যাপটপের ব্যাটারি ফুল চার্জ হয়ে গেলে অটোমেটিক চার্জ নেয়া বন্ধ করে দেয়। এবং ব্যাটারির কোন ক্ষতি হতে দেয় না।তবুও সারা রাত চার্জে দিয়ে রাখলে ক্ষতির আশঙ্কা থেকেই যায়। কারণ এর ফলে বিভিন্ন বৈদ্যুতিক গোলযোগ সৃষ্টি হতে পারে। এবং ল্যাপটপটি নষ্ট হয়ে যেতে পারে। তাই আমাদের উচিত সারা রাত চার্জ দিয়ে না রেখে ফুল চার্জ হলে পরে চার্জার আন প্লাগ করে রাখা।
খাওয়ার সময় সতর্কতা-
আমরা অনেকেই ল্যাপটপ ব্যবহারের সময় চা-কফি এবং অন্যান্য খাবার খেয়ে থাকি। চিন্তা করুন তো আপনি চা খাচ্ছেন বা কফি খাইতেছেন এবং কাজ করতেছেন হঠাৎ করে আপনার চা বা কফি আপনার ল্যাপটপের কিবোর্ড এর উপর পড়ে গেল এবং সরাসরি তার ল্যাপটপ এর ভিতরে প্রবেশ করল। তাহলে কেমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে ভেবেছেন কি?
অবশ্যই আপনার ল্যাপটপটি নষ্ট হয়ে যেতে পারে। একটি পুরোপুরি নষ্ট না হলেও কিবোর্ডের অবশ্যই ক্ষতিসাধন হবে। এছাড়াও বিস্কিট বা অন্যান্য কিছু খাওয়ার সময় এর পুরো কিবোর্ড এর ভিতরে গিয়ে কিবোর্ড এর কার্যক্ষমতা হ্রাস করতে পারে। ল্যাপটপ ব্যবহারের সময় কোনো কিছু খাওয়া থেকে বিরত থাকুন বা খাওয়ার সময় ল্যাপটপ ব্যবহার থেকে বিরত থাকুন।
বহন করার সময় ব্যবহার করুন সঠিক ব্যাগ ল্যাপটপ বহন করার জন্য বাজারে বিভিন্ন ধরনের ব্যাগ রয়েছে। আমাদের সকলের উচিত এ সকল ব্যাগ ব্যবহার করা। কিন্তু আমরা অনেকেই ল্যাপটপ পরিবহনের জন্য যেকোনো ধরনের ব্যাগ ব্যবহার করি এবং অন্যান্য জিনিসপত্রের ভিতরে ল্যাপটপ নিয়ে যায়। এর ফলে ল্যাপটপটি চাপ খেতে পারে এবং দাগ পড়তে পারে।
নিয়মিত পরিষ্কার করুন-
ল্যাপটপের কিবোর্ড এবং অন্যান যন্ত্রাংশ গুলো নিয়মিত পরিস্কার করুন।এর জন্য পরিষ্কার কাপড়, টিস্যু বা কটন বাড ব্যাবহার করতে পারেন।এবং ২-৩ মাস অন্তর অন্তর ভিতরের যন্ত্রাংশ গুলো পরিষ্কার করতে হবে। তবে এক্ষেত্রে যদি আপনি যথেষ্ট দক্ষতা সম্পন্ন না হয়ে থাকেন তাহলে নিজে হাতে কখনোই এ কাজ করতে যাবেন না।প্রয়োজনে এক্সপার্টদের দিয়ে পরিষ্কার করানো ভালো।
এসকল বিষয় গুলো মেনে চললে ল্যাপটপ যেমন থাকবে নতুনের মত ঠিক তেমনি এটি দীর্ঘদিন যাবত সার্ভিস দিবে।তাই এই নুন্যতম সতর্কতা অবলম্বন করুন।
[…] […]