যে শহর স্বপ্নের চেয়েও সুন্দর । যে শহরে থাকা খাওয়ার কোন খরচ নাই ।

কল্পনা করতে পারেন এমন একটি শহরের কথা যেখানে জাতি-ধর্ম-বর্ণ কোন ভেদ নেই,যেখানে সবাই সমান । শুধু তাই না সবার বেতনও সমান। সে ঝাড়ুদার হোক, প্রকৌশলী হোক, শিক্ষক হোক, মৎস্যজীবী হোক, যাই হোক না কেন সবার বেতন সমান। এই শহরে বসবাসকারী সবাই আসলে যা ইচ্ছা তাই করতে পারে। অর্থাৎ যে যে পেশায় কাজ করতে চায় সে সেই পেশায় কাজ করতে পারে। তারা কেউ কারো থেকে বড় হওয়ার জন্য কাজ করে না নিজের সম্প্রদায় ও গোষ্ঠীর জন্য মিলেমিশে কাজ করে।


কথা বলছি দক্ষিণ ভারতের তামিলনাড়ুতে অবস্থিত সেখানের ছোট্ট একটি শহরকে নিয়ে,এই শহরের নাম অরভিল (Auroville) ।

একজন ফরাসী নারী মারিশা আলফাজা এই শহরটি স্থাপন করেছিলেন।
যে শহরে কোন ভেদাভেদ থাকবে না যে শহরে থাকবেনা কোন প্রকার দুর্নীতি থাকবেনা স্বজনপ্রীতি।
এখানে পৃথিবীর যেকোন প্রান্তের লোক সুখে-শান্তিতে স্বস্তিতে বসবাস করতে পারবে এবং স্বাধীনভাবে চলাফেরা করতে পারবে।। পৃথিবীর প্রায় 60 টি দেশ থেকে আগত প্রায় তিন হাজারের উপরে অধিবাসী এখানে বসবাস করে। কোন পাসপোর্ট বা দলিল ছাড়া ইতালি আফ্রিকা নেদারল্যান্ডের মত দেশ থেকে আগত অধিবাসীরা সেখানে বসবাস করে আসছে। এখানে দশটি স্কুল আছে তবে সব স্কুলের ক্যাম্পাস নাই এখানে যে যেভাবেই চায় সেভাবেই হেসে-খেলে আঁকাআকি করে পড়ালেখা করতে পারে। এখানে যে কেউ যেকোনো স্কুলেই পড়তে পারে সবাই আনন্দপূর্ণ পরিবেশে লেখাপড়া করে থাকে। অরভিলের (Auroville) পুরো শহরটাই যেন স্বপ্নের মত রঙিন এবং সুন্দর। এখানের সবচেয়ে বড় আকর্ষণ বলা হয় মাতৃমন্দির কে। সেখানে প্রার্থনা করার জন্য বিশেষ কোন ধর্মের অনুসারী হওয়া বা কোন বাধ্যবাধকতা নেই যে কেউ যেকোনো সময় এই মন্দিরের সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারে এবং প্রার্থনা করতে পারে। এখানে শুধু মৌনতা এবং শান্তি কেই প্রাধান্য দেওয়া হয়। অরভিলের এই মাতৃ মন্দিরটি প্রায় ৩৭ বছর সময় নিয়ে স্থাপন করা হয়।


জানা যায়, বিশ্বের বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা UN বা UNESCO থেকে অরভিল আর্থিক সহায়তা পায়।তাছাড়া সেখানে বসবাসকারী যে ডাক্তার, যে শিক্ষক, যে ঝাড়ুদার সবাই ১২,০০০ রুপী করে বেতন পায়। আর সেটা দিয়ে তারা তাদের বাড়তি খরচ যোগায়। এখানে আর একটি মজার বিষয় হচ্ছে অরভিলে (Auroville) কোন কিছু কিনতে গেলে কাউকে কোন ক্যাশ দিতে হয় না,স্থানীয়দের কাছে থাকা কার্ড বা একটা নম্বর দেখালেই তাদের একাউন্ট থেকে টাকা কেটে রাখা হয়। সেখানে বিদ্যুৎ নাই এমনটি নয় তথাপি সবাই রান্না বান্না বা গৃহস্থালি কাজের জন্য সৌরবিদ্যুৎ ব্যবহার করে। এখানে থাকা খাওয়া বা কোন কিছুর জন্য তাদের নিজেদের কোন আয় করতে হয় না সব কিছুই অরভিলের স্থানীয়দের সুন্দর ভাবে বন্টন করে দেয়া হয়। তবে এখানে থাকার শর্ত একটাই শান্তি, সৌহার্দ্য ও মিলেমিশে সকলের সাথে বসবাস করতে হবে। হিংসা হানাহানি মারামারি থেকে দূরে থেকে একে অপরের প্রতি স্নেহ ভালোবাসা সৌহার্দ্যপূর্ন মনোভাব থাকলেই অরভিলে থাকা যাবে। ১৯৬৮ সাল থেকে অরভিল (Auroville) তার বাসিন্দাদের দেখভাল করে আসছে। শুধু সমুন্নতা এবং স্বস্তি বজায় রাখতেই স্বাচ্ছন্দে এরা কাজ করে থাকে। এবং তাদের যখন-তখন নিজের ইচ্ছামত চাকরি পরিবর্তন করার ও স্বাধীনতা রয়েছে শর্ত একটা ‘বিশ্বাস’। এখানে বাড়ি বানানো হলেও সবাই জানে খাটি বাশ বা খাটি ইট, বালি,সিমেন্ট দিয়ে বাড়ি তৈরি করা হচ্ছে।
এই পরীক্ষামূলক শহর বা রাষ্ট্র যদি সফলতা পায়,তাহলে কেমন হতে পারে আমাদের ভবিষ্যৎ- ভেবে দেখেন তো একবার।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here