করোনাভাইরাসঃ বয়সভেদে করোনাকালীন পরিচর্যা কোভিড-১৯ রোগের লক্ষণ এবং চিকিৎসা

করোনাভাইরাসঃ বয়সভেদে করোনাকালীন পরিচর্যা কোভিড-১৯ রোগের লক্ষণ এবং চিকিৎসা
বয়সভেদে করোনা কালীন চিকিৎসা

করোনাভাইরাসঃ বয়সভেদে করোনাকালীন পরিচর্যা

বর্তমান বিশ্বে যে বিষয়টির কারনে সমগ্র পৃথিবী স্থবির হয়ে পড়েছে তার নাম  হল কোভিড ১৯। যা আমাদের সবার কাছে করোনাভাইরাস নামে পরিচিত। এই রোগকে ঘিরে  প্রতিনিয়ত আতংক বেড়েই চলেছে। এই রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যাও ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। করোনা সংক্রমণ থেকে রেহাই পেতে এবং করোনাকালীন সময়ের মোকাবেলা করার জন্য  বয়সভেদে  সকলেরই বিশেষ পরিচর্যা প্রয়োজন। করোনায়-শ্বাস-ব্যায়াম খুবই গুরুত্বপূর্ন

করোনা কি এবং কিভাবে ছড়ায়??
করোনাভাইরাস সংক্ষেপে কোভিড ১৯ নামে পরিচিত। এই ভাইরাসের উৎপত্তি চায়নাতে। পরে তা দ্রুত বিশ্বের অন্যান্য দেশেও ছড়িয়ে পড়ে।  এই ভাইরাস আক্রান্ত ব্যক্তির হাচি কাশি,  মল মূত্র এর মাধ্যমে ছড়ায়।  এছাড়া ব্যক্তির সংস্পর্শে আসলে ও অন্যরাও এই রোগে আক্রান্ত হতে পারে।

কোভিড-১৯ রোগের লক্ষণ এবং চিকিৎসা

মূলত  গলা ব্যথা, শ্বাস কষ্ট,  কফ, জর এই রোগের প্রাথমিক লক্ষণ। অক্সিজেন এর স্যাচুরেশন কমে যায় এজন্য শ্বাস কষ্ট দেখা দেয়। করোনা সন্দেহে ব্যক্তিকে নূ্নতম  ১৪ দিন কোয়ারেন্টাইনে থাকতে হ্য়। আক্রান্ত রোগিকে আইসোলশনে পাঠানো হয়। এসময় রোগিকে বাকিদের থেকে আলাদা রাখতে হ্য়। করোনাকে মোকাবেলা করতে হলে বিভিন্ন বয়সের মানুষ জনের প্রতি বিশেষ পরিচর্যা নেয়ার ব্যবস্থা  করতে হবে।

করোনাভাইরাসঃ নবজাতকের প্রতি করনীয় :
করোনা তথা কোভিড -১৯ হাঁচিকাশি কফ থু থু এর মাধ্যমে ছড়ায়। আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শ এ আসলে সহজেই নবজাতক শিশু এই রোগে আক্রান্ত হতে পারে। কারন এদের প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকে। শিশুর যাতে ঠান্ডা না লাগে সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে। মায়ের করোনা থাকলে শিশুর ও হতে পারে এ বিষয়ে উপযুক্ত প্রমান না পাওয়া গেলেও এমনটা হওয়ার আশংকা বেশি বলে বিজ্ঞানীরা মনে করছেন। এজন্য বুকের দুধ পান করানো থেকে বিরত থাকবে। ক্যাংগারু উপায়ে বাচ্চাকে কোলে নিতে হবে। শিশু যাতে কোনো ভাবেই আক্রান্ত রোগির সংস্পর্শ এ না আসে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। আশেপাশের পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার দিকে নজর দিতে হবে।হাত না ধুয়ে কোনোভাবেই ওদের স্পর্শ করা যাবে না। সাবান না থাকলে স্যানিটাইজার দিয়ে হাত পরিষ্কার করে নিতে হবে। শিশুদের মাস্ক পরানো সম্ভব না তাই ওদেরকে নিয়ে অযথা বাইরে যাওয়া যাবে না।

করোনাভাইরাসঃ গর্ভকালীন সময়ে কি করনীয়:

গর্ভাবস্থায় করোনায় আক্রান্ত হলে গর্ভপাতের আশংকা থাকে। তাই গর্ভবতী মহিলাকে আক্রান্ত  রোগি থেকে দূরে থাকতে হবে। এছাড়াও ২০ সেকেন্ড ধরে হাত ধোয়া, খাবার আগে ও পরে হাত পরিষ্কার করা, বাথরুম থেকে আসার পর হাত ধোয়া এসবের দিকে খেয়াল রাখতে হবে। অনাগত সন্তানের সংক্রমণ এর বিষয়টি নিশ্চিত  করার জন্য চায়নাতে গবেষকরা আক্রান্ত ৪ মহিলার উপর পরীক্ষা চালিয়েছেন। তিন জনের ক্ষেত্রে কোনো নেতিবাচক প্রভাব পড়েনি। আর একজন পরে অনুমতি দিতে চায়নি। মা যদি ফ্লু, ডায়াবেটিস, বা উচ্চ রক্তচাপের রোগি হন তবে সেক্ষেত্রে বাচ্চা ও মায়ের জন্য ঝুকি আরো বেড়ে যায়। তাই নিয়মিত ওষুধ খাওয়া, ডাক্তারের সেবা নেয়া এসব যথাসাধ্য ভাবে করতে হবে। কোনো জটিলতা দেখা দিলে এ অবস্থায় বাড়িতে  থেকে চিকিৎসা নেয়াই ভালো। টেলিমেডিসিন এ সেবা নিতে পারেন।
মানসিক স্বাস্থ্য এর দিকে লক্ষ রাখা:
তাদের মনোবল যাতে ভেঙেনা  পড়ে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। তাদেরকে উৎফুল্ল রাখতে হবে। মানসিক সা্হস জোগাতে হবে।

করোনাভাইরাসঃ মধ্যবয়সীদের করনীয় :
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে করোনায় আক্রান্তদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি রয়েছে মধ্যবয়সী মানুষজন। আইইসিডিআর তাদের এক গবেষনায় জানিয়েছে আক্রান্তদের ৬২ শতাংশই হচ্ছে ২১ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে। এর মধ্যে ২১ শতাংশ হচ্ছে ৩১ থেকে ৪০ বছর বয়সী। কাজেই এই বয়সী মানুষের মধ্যে অধিক সচেতনতা গড়ে তুলতে হবে। মাস্ক ব্যতীত বাইরে যাওয়া যাবে না। ধূমপান পরিত্যাগ করতে হবে। শ্বাস কষ্টের রোগীকে নিয়মিত ওষুধপাতি খেতে হবে। হাত ধোয়ার অভ্যাস করতে হবে। অযথা বাইরে যাওয়া যাবে না। হাচি কাশি দেয়ার সময় মুখ ঢেকে নিতে হবে। বাস ট্রেন অন্যান্য যানবাহন এ না উঠাই ভালো। অন্যদের সাথে ৬ ফিট দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। অযথা ভীড় এড়িয়ে চলতে হবে। খেলাধুলো, সিনেমা হল, ধর্মীয় স্থান এসব জায়গায় জন সমাগম না করে যথা সম্ভব দূরত্ব মেনে চলতে হবে। করমর্দন, কোলাকুলির মাধ্যমে ভাইরাস ছড়াতে পারে। এজন্য হ্যান্ড শেক না করার জন্য বলেছেন বিশেষজ্ঞরা। টাকা পয়সার গায়ে জীবানু লেগে থাকতে পারে। তাই এসব জীবাণুমুক্ত করার ব্যাপারে জোর দিতে হবে। সুষম খাবার খেতে হবে। গরম পানি, চা, কফি এসব বেশি করে খেতে হবে। তবে হ্যা এক্ষেত্রে ক্যাফেইন যেন শরীরের ক্ষতি  করতে না পারে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।

করোনাভাইরাসঃ বয়স্কদের যত্নে যা করনীয় :


বয়স্করা অনেক রোগে আক্রান্ত থাকে। ডায়াবেটিস, হৃদরোগ, হাই ব্লাড প্রেসার এসব রোগে আক্রান্ত থাকায় তাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ও কম থাকে। এজন্য করোনায় আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়। তাদের যাতে ঠান্ডা না লাগে সেদিকে বিশেষ সতর্ক থাকতে হবে। তাদেরকে নিয়মিত ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। ডায়াবেটিস রোগিদের সুগার লেভেল যাতে নিয়ন্ত্রনে থাকে। নিয়মিত সুগার লেভেল চেক করতে হবে। পালস রেট আর ব্লাড প্রেসার যেন নরমাল থাকে সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে।বাইরে গেলে মাস্ক নিয়ে যাবে, তবে বেশিক্ষন মাস্ক পরলে অক্সিজেন এর ঘাটতি দেখা দেয় তাই একাকি মাস্ক না পরলেও চলবে।  বৃদ্ধদের মানসিক অবস্থা যাতে ঠিক থাকে সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে। তাদের প্রতি রূঢ় হওয়া যাবে না। বেশি তৈলাক্ত খাবার খাওয়ানো যাবে না। ফল মূল শাক সবজি বেশি করে খেতে হবে। প্রত্যহ কিছু শ্বাস ব্যায়াম করতে হবে। এতে ভালো উপকার পাওয়া যায়। পাশাপাশি শ্বাস
ক্ষমতা বাড়বে। লাংস বেশি কর্মক্ষম হবে।

প্রচুর পানি পানে কি করোনাভাইরাস মারা যায়??
অনেকের মধ্যে এই ধারনা আছে যে করোনাভাইরাসকে প্রতিরোধ করতে হলে বেশি বেশি পানি খেতে হবে। গবেষকরা বলেছেন,  এর কোনো কার্যকরী প্রমান নেই। তবে পানি পান করলে শরীর ভালো থাকে তাই স্বাস্থ্য বিধি মেনে চলতে হবে। গরম চা, কফি, আদা চা এসব খেলে ঠান্ডার উপশম হয়। পাশাপাশি সুষম খাবার খেলেও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়বে বলে আশা করছেন গবেষকরা।

করোনাভাইরাসের লক্ষণ এবং করণীয়

করোনা ভাইরাসের ক্ষুদ্রতম কণা কতদূর পর্যন্ত যেতে পারে ।এ সম্পর্কে জানুন

করোনা ভাইরাস মোকাবেলায় সচেতন হওয়ার বিকল্প নেই।  নিজে সচেতন থাকার পাশাপাশি আশেপাশের মানুষকেও সচেতন  করতে হবে। গৃহ পালিত পশুর দেখা শোনা করার পর অবশ্যই হাত ধুয়ে নিতে হবে।অযথা পশুপাখির গায়ে হাত দেয়া যাবে না।  যোগাযোগ মাধ্যম গুলোকে সচেতনতামূলক খবর বেশি বেশি প্রচার করতে হবে।বিদেশ থেকে আগত এমন কোন ব্যক্তির করোনা আছে কিনা তা নিশ্চিত হওয়ার আগ পর্যন্ত তার থেকে দূরত্ব বজায় রাখতে হবে।  নিউমোনিয়া, ফুসফুসের রোগে আক্রান্ত হলে এই রোগের সংক্রমণ এর সম্ভাবনা বেশি থাকে। তাই এসব রোগে যাতে আক্রান্ত না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। হাচি, কাশি, ব্রেথিং প্রব্লেম দেখা দিলে,নিলচে ঠোট অথবা মুখ, অনিয়ন্ত্রিত রক্তক্ষরণ, খিচুনি,মুখ হঠাত ঝুলে যাওয়া,কথা বলায় অসুবিধা, প্রচুর বমি হওয়া, ডায়রিয়া ,  করোনা আক্রান্ত ব্যক্তির সেবা করলে, অথবা করোনা রোগি রাখা আছে এমন জায়গায় যাতায়াত করলে,  এই কারন অথবা লক্ষন গুলো থাকলে করোনা সন্দেহে পরীক্ষা করাতে হবে।এমন অবস্থায় ইমার্জেন্সি ৯১১ অথবা ১৬২৬৩ নাম্বারে কল দিতে হবে।  সচেতন থাকলে এবং স্বাস্থ্য বিধি মেনে চললে করোনাকে মোকাবেলা সম্ভব হবে।

করোনা চিকিৎসায় প্লাজমা থেরাপি এই মুহূর্তে একটি জরুরী চিকিৎসা পদ্ধতি এ সম্পর্কে জানুন

বিশেষজ্ঞদের সহায়তা নিয়ে প্রতিবেদনটি লিখেছে – ” নওশিন মারজিয়া, মেডিকেল শিক্ষার্থী “