লেবুর অসাধারণ কিছু উপকারিতা
লেবু আমাদের চারপাশের অতিপরিচিত একটি ফল।
লেবুতে রয়েছে বিভিন্ন পুষ্টি উপাদানের সমারোহ। যা শরীরকে বিভিন্ন জটিল রোগ ব্যাধি এমনকি ক্যান্সারের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে সাহায়তা করে।লেবুর উপকারিতা সম্পর্কে জানতে আগ্রহী হয় না,এমন লোক খুজে পাওয়া দুষ্কর।
দৈনন্দিন জীবনে সকলেই কম বেশি লেবু খেয়ে থাকি।বিশেষত ভাত খাওয়ার সময় এক টুকরা চায়ই চাই। সাধারণত খাবারের স্বাদ বাড়ানোর জন্য এটির ব্যবহার সর্বাধিক । আবার অনেকে এটির আচার তৈরি করেও খেয়ে থাকেন। লেবু আকারে ছোট ফল হলেও এর উপকারিতা প্রচুর আর পুষ্টিগুণেও ভরপুর।
আসুন জেনে নিই লেবুর অসাধারণ কিছু উপকারিতা-
ক্যান্সার প্রতিরোধে লেবু
লেবুতে যেসব পুষ্টি উপাদান রয়েছে,সেটা আমাদের শরীরের অবাঞ্চিত উপাদান দূর করতে সহায়তা করে।মূলত নিয়মিত লেবু খেলে তার শরীরে ক্যান্সার বাসা বাধতে পারে না।
পাকস্থলী সতেজ রাখে
লেবু আমাদের পাকস্থলীর জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ টনিক।পরিমাণমত নিয়মিত লেবু খেলে বদ হজম,কোষ্ঠকাঠিন্য, এছাড়া পেটের অন্যান্য পীড়া থেকে সহজেই মুক্তি মেলে। লেবুর রসের সাথে যদি একটু মধু মিশিয়ে খাওয়া হয় তবে সেটা অত্যন্ত আদর্শ খাবার হিসাবে পরিণত হয়।
ফুসফুসের জন্য উপকারী
মানব শরীর থেকে বিষাক্ত চর্বি ও লিপিডের পরিমাণ বের করে শরীরকে সতেজ ও সুস্থ্য রাখতে সহায়তা করে লেবুর রস।
সর্দি কাশিতে লেবু
নিয়মিত লেবু সেবন শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে ব্যাপক ভূমিকা রাখে।যাদের ঠান্ডা জনিত সমস্যা আছে তাদের জন্য লেবু বাধ্যতামূলক ভাবেই খাওয়া জরুরি, তাহলে Vitamin C শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে করে ঠান্ডা কাশি জনিত রোগ থেকে শরীরকে মুক্তি দিয়ে থাকে।
হাইপার টেনশনের মাত্রা কমায়
যারা খাবারে নিয়মিত যথেষ্ট পটাশিয়াম গ্রহণ করে না, তারা সহজেই বিভিন্ন রকমের হৃদরোগে আক্রন্ত হয়ে পড়ে। লেবুতে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম রয়েছে যা হাইপার টেনশন কমাতে সহায়তা করে থাকে।
ত্বকের যত্নে
ত্বকের লাবণ্য ধরে রাখতে ও ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে লেবুর জুড়ি নেই। ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধির জন্য , মধু ও লেবুর রস একসাথে মিশিয়ে ত্বকে ব্যবহার করলে ত্বকের সৌন্দর্য বৃদ্ধি পায়। এটি ব্যবহারের ফলে ত্বকের সংকোচন সৃষ্টিকারী পদার্থকে নিয়ন্ত্রণ রাখতে সাহায্য করে। অর্থাৎ, মুখের চামড়া ঝুলে যাওয়া রোধ করে।চামড়ার অতিরিক্ত তেল অপসারণ করে ত্বককে করে তোলে আরো লাবণ্যময়। । লেবুর রসে থাকে Natural Antiseptic । যা ত্বকে ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ দূর করে। যার ফলে এটি ব্রণ দূর করে ত্বকের রং উজ্জ্বল করে তোলে।এবং সাথে সাথে বয়সের বলিরেখাও দূর করতে সাহায্য করে।
মুখের দুর্গন্ধ ভাব দূর করে
লেবু মাড়ির ব্যথা, দাঁতের সমস্যা, মুখের দুর্গন্ধ দূর করে। লেবুর পানি খাবার পর দাঁত ব্রাশ করার প্রয়োজন নেই।
নখকে সুন্দর করে
অতি প্রাচীন কাল থেকেই লেবু সৌন্দর্য চর্চায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে।লেবুর রস দিয়ে নখ পরিষ্কার করলে,সহজেই নখের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পায়। নিয়মিত লেবুর রসে হাত এবং পা ভিজিয়ে রাখলে হাত পা এর উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পায়।
ওজন কমাতে
নিয়মিত ফ্রেশ লেবুর জুস+পানি খেলে ধীরে ধীরে ওজন কমাতে সাহয্য করবে।
পিএইচ মাত্রা নিয়ন্ত্রণ PH
লেবু অম্লীয় হওয়া সত্ত্বেও শরীরে প্রয়োজনে ক্ষারধর্মী আচরণ করে। এটি শরীরে অনেক সময় এসিডিটি তৈরি না করে (PH) পিএইচ মাত্রাকে সঠিক অবস্থায় রাখে। লেবুর রস ও লবণপানি এক সংগে পান করলে পিএইচ মাত্রা ঠিক থাকে।
গর্ভবতী নারীদের সুস্থতায় লেবু
লেবু গর্ভবতী নারী ও তার পেটের বাচ্ছার জন্যও অত্যন্ত উপকারি। লেবুর ভিটামিন সি(vitamin C) ও পটাশিয়াম শিশুর হাড়, মস্তিষ্ক ও দেহের কোষ গঠনে সহায়তা করে।শিশুরা লেবুর রস থেকে পর্যাপ্ত পুষ্টি পেয়ে থাকে এবং তাদের শরীর গঠনে লেবু ব্যাপক ভূমিকা রাখে।
শ্বাসকষ্ট কমাতে লেবুর ব্যবহার
শ্বাসকষ্ট যে কতটা কষ্ট দায়ক যার নাই সে কখনোই অনুভব করতে পারবে না। চারিদিকে এত বাতাস অথচ একজন শ্বাসকষ্টের রোগী একটু শান্তি করে বাতাস তার ফুসফুসে নিতে পারছে না। এই লেবুর রস এই শ্বাসকষ্ট কমাতে যথেষ্ট ভূমিকা রাখে।যাদের মৃদু এজমার সমস্যা আছে তাদের উচিত নিয়মিত লেবুর রস পান করা।
লেবু বয়সের ছাপ দূর করে
অনেকেরই মুখে বয়সের দাগ বা বিভিন্ন স্পট পরে, এই সব অবাঞ্ছিত দাগ দূর করতে লেবুর রস দারুণ কার্যকর। এসব রেখাগুলোতে অল্প লেবুর রস দিয়ে ১৫ মিনিট রাখুন ও ধুয়ে ফেলুন।এভাবে কিছু দিন ব্যবহার করলে ভাল একটা ফল পাওয়া যায়।
অতিরিক্ত লেবুর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
প্রকৃতপক্ষে লেবু আমাদের উপকারী ফল হিসাবেই অতি পরিচিতি। তারপরও লেবুর কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া রয়েছে।যেগুলো জানা আমাদের জন্য অতীব জরুরি –
১) গ্যাসের সমস্যা যাদের শরীরে আছে তারা অতিরিক্ত লেবু খেলে তাদের বুকে জ্বালা করতে পারে।
২) লেবুতে আবার অনেকের এলার্জি হয়ে থাকে, তাই লেবু চিকিৎসা গ্রহণের পূর্বে যাচাই করে নেয়া উচিত আসলেই শরীরের জন্য লেবু সহনীয় কি না?
৩) যারা ডায়েট করছেন তাদের শরীরে অনেক সময় কার্বহাইড্রেড ও অন্যান্য পুষ্টি উপাদানের পরিমাণ কমে যেতে, সেক্ষেত্রে বেশি লেবু গ্রহণ করলে অতিরিক্ত ক্লান্তি লাগতে পারে।
৪) অতিরিক্ত লেবুর রস খেলে এসিডিটির সমস্যা দেখা দিতে পারে। এতে পেট ফাঁপা,বুকে জ্বালা, পিঠে ব্যাথাসহ নানান ধরনের সমস্যা ও অস্বস্তি অনুভূত হতে পারে।
৫) অতিরিক্ত লেবুর রস পানের ফলে পেটে বা তলপেটে ব্যথা হতে পারে।
৬) লেবুর শরবত অতিরিক্ত পান করলে শরীরে কিছুটা দুর্বলতা অনুভূত হতে পারে।
৭) যেকোনো মানুষের পরিমিত লেবু খাওয়া স্বাস্থের জন্য ভালো কিন্তু অতিরিক্ত লেবু স্বাস্থের জন্য ক্ষতিকর। লেবু বেশি খেলেও হতে পারে হিতে-বিপরীতও হতে পারে।
লেবু আমাদের শরীরের জন্য অত্যন্ত উপকারি।তাই সর্বদা পরিমাণমত লেবু গ্রহণ করা সমীচীন।