প্রিন্টার একটি প্রতিদিনের গুরুত্বপূর্ন ডিভাইস, বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন কারণে প্রিন্টারের প্রয়োজন পড়ে। হাতের কাছে একটা প্রিন্টার থাকা এখন বেশ কাজের। অফিসের কোনো একটা প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট এখনই প্রিন্ট করা প্রয়োজন, কিংবা ছোটো ছেলেমেয়েদের স্কুলের প্রজেক্ট এর কভারলেটার প্রিন্ট দেওয়া প্রয়োজন এমন অসংখ্যা প্রয়োজন মেটাতে বসাতেই একটা প্রিন্টার রাখা প্রয়োজন। কিন্তু বাজারে এই হরেক রকমের কোম্পানির হাজার রকমের মডেল থেকে আপনার প্রয়োজন মেটাতে পারে কোন মডেল টি? কিসের ভিত্তিতের বাছাই করবেন আপনার জন্য কোন মডেল টা যুতসই হবে? তাহলে আপনার জন্যই এই পোস্ট । printer price in bangladesh
মানসম্মত প্রিন্টার কিনতে হলে আগে তার ব্যাপারে জানতে হবে। চাইলেই কয়েকটা ভালো মডেল বলে দেওয়া যায় কিন্তু তা থেকে বরং যদি আপনি ই প্রিন্টারের ভালো মন্দ বুঝে নিজেই মডেল বেছে নেন তাহলে সেটাই সবচেয়ে ভালো হবে। কারণ যেটা একজনের জন্যে উপযোগী তা অন্যজনের চাহিদা নাও মেটাতে পারে। চলুন তাহলে আগে প্রিন্টার সম্পর্কে কিছু জেনে নেই।
প্রিন্টার কি?
সহজভাবে বললে প্রিন্টার একটি আউটপুট ডিভাইস যা আমাদের বিভিন্ন গ্রাফিক্স বা টেক্সট কে কাগজে ছেপে দিতে পারে।
বাজারে কি কি ধরণের প্রিন্টার রয়েছে?
প্রিন্টারের ভাগ অনেকভাবেই করা যায় কালির হিসেবেও প্রিন্টারকে ভাগ করা যায় আবার প্রিন্ট করার ধরণের ভিত্তিতেও প্রিন্টারকে বিভিন্ন ধরণে ভাগ করা যায়। সেসব আলোচনায় আমরা আজ যাবোনা, বরং আমরা সাধারণত বাড়িতে কিংবা অফিসে সবচেয়ে বেশি যেই ধরণের প্রিন্টার ব্যবহার করি সে ধরণের প্রিন্টার গুলো নিয়েই আজ কথা বলবো।
ইঙ্কজেট প্রিন্টার( Inkjet printer): এ ধরণের প্রিন্টার কাগজে কালি মতো ক্ষুদ্র কণিকা আকারে ছেড়ে দেয়। তারপর বিদ্যুতিক চার্জযুক্ত দ্রুট প্লেট এদের গাইড করে যাতে কাগজে কালিগুলো ঠিকভাবে বসে যায়। এ ধরণের প্রিন্টার বেশ জনপ্রিয় তার কারণ হলো এরা কম শব্দ করে, ভালো কোয়ালিটি প্রিন্ট দেয় আবার প্রিন্ট স্পীড ও বেশ ভালো। ছবি প্রিন্ট করার ক্ষেত্রে ইঙ্কজেট প্রিন্টার বেশ জনপ্রিয়।
ইঙ্কট্যাঙ্ক প্রিন্টারঃ এটাও এক ধরণের ইঙ্কজেট প্রিন্টার তবে পার্থক্যা হলো এ ধরণের প্রিন্টার কার্টিজের বদলে ব্যবহার করে তরল কালির ছোটো ট্যাংক। কালি রিফিল করার প্রয়োজন হলে বোতল করে কিনতে হয়। প্রাথমিকভাবে ইঙ্কট্যাক প্রিন্টারের দাম বেশি হলেও কালির খরচ কম হওয়ার বেশি প্রিন্ট করার জন্য লং টার্মে বেশ উপযোগী।
লেজার প্রিন্টার (Laser Printer) : লেজার প্রিন্টার ফটোকপি মেশিনের মতো কাজ করে। প্রিন্টারের ভেতরে একটা ড্রামের ভেতরে টোনার (কালির গুড়া) সেট করা হয় লেজার বীম ব্যবহার করে তারপর সেটাকে কাগজে ঘোরালেই তা ছাপা হয়ে বের হয়ে আসে। এ ধরণের প্রিন্টার সাধারণত সাদাকালো প্রিন্টিং এ বেশি ব্যবহার করা হয়। প্রচুর দ্রুত প্রিন্ট করতে পারে বলে অফিসে ও এদের চাহিদা অনেক। তবে এ ধরণের প্রিন্টারে চালু করলে ভেতরের রোলার গরম হতে বেশ কিছুক্ষণ সময় নেয় যেটা অন্য প্রিন্টারগুলোতে দেখা যায়না। আর রিপেয়ারিং খরচ ও অন্য প্রিন্টারের তুলনায় একটু বেশি।
মাল্টিফাংশন প্রিন্টারঃ কেমন হয় যদি এক প্রিন্টার দিয়ে আপনি অনেক ধরণের কাজ করতে পারেন? যাদের জায়গা কম কিন্তু বিভিন্ন ধরণের কাজের জন্যে স্ক্যানার, প্রিন্টার, ফ্যাক্স ইত্যাদি মেশিনের প্রয়োজন হয় তাদের জন্যে বেস্ট অপশন হলো মাল্টিফাংশন প্রিণ্টার। বেশিরভাগ মাল্টিফাংশন প্রিন্টারেই প্রিন্ট,স্ক্যান,কপি, ফ্যাক্সের মতো সব সুবিধা একসাথেই থাকে। তাই জায়গা ও কম লাগে আর অনেকগুলো ডিভাইস আলাদা আলাদা না কিনে একটা ডিভাইস কেনার কারণে প্রাথমিক খরচ ও কম প্রয়োজন হয়। সাধারণত এই ধরণের প্রিন্টার ও কালির জন্যে কার্টিজ ব্যবহার করে।
এখন আসা যাক মূল আলোচনায়, সেরা প্রিন্টার বেছে কেনার উপায়
যেসব জিনিস বিবেচনা করে প্রিন্টার কিনবেন-
প্রথম দেখার ব্যাপার হলো আপনার বাজেট কতো? আগেই সেটা ঠিক করে নিন। আপনার চাহিদা কি? আপনি যদি বাসায় ব্যবহার করেন এবং খুব কম প্রিন্ট করার প্রয়োজন হয় তাহলে আপনি চাইলে ছোটোখাটো একটা ইঙ্কজেট প্রিন্টার নিয়ে নিতে পারেন। এসব প্রিন্টারের দাম প্রাথমিকভাবে কম হলেও কালির দাম বেশি তাই যদি প্রিন্ট সংখ্যা মাসে ৫০০ বা ৬০০ পেজের বেশি না হয় তাহলেই কার্টিজ যুক্ত ইঙ্কজেট প্রিন্টারের দিকে মন দিবেন।
কিন্তু আপনার যদি দ্রুত গতিতে প্রচুর সাদাকালো প্রিন্টের প্রয়োজন হয় তাহলে আপনি লেজার প্রিন্টার ব্যবহার করতে পারেন। আমাদের দেশে অফিসের কাজে এই ধরণের প্রিন্টার প্রচুর ব্যবহার হয়। খরচ ও তুলনামূলকভাবে বেশ কম।
আপনার যদি বাজেট কম থাকে, অফিসে বা বাসায় জায়গার পরিমাণ কম হয় তাহলে আপনি মাল্টিফাংশন প্রিন্টার দেখতে পারেন। কম খরচে এসব প্রিন্টারে একই সাথে প্রিন্টার, স্ক্যানার ফ্যাক্সের মতোন সব সুবিধা দিতে পারে। তাই জায়গার ও কম প্রয়োজন হয়। তবে কিনলে একটূ বেশি দাম দিয়ে নেওয়া উচিত কারণ কম দামের মাল্টিফাংশন প্রিন্টারগুলো খুব দ্রুতই নষ্ট হয়ে যেতে পারে।
বাসায় বা অফিসে লং টার্ম ব্যবহারের জন্যে ইঙ্কট্যাংক প্রিন্টার ব্যবহার করতে পারেন। প্রাথমিকভাবে এইসব প্রিন্টারের দাম বেশি হলেও কালির খরচ কম হওয়ায় অনেক দিন ব্যবহার করলে বেশ কম খরচে প্রিন্ট করা সম্ভব। আর প্রিন্ট কোয়ালিটিও বেশ ভালো হয়।
আপনার চাহিদা, বাজেট এবং কতো সময় ধরে ব্যবহার করবেন তা ঠিক করে তারপর বাজেটের আশেপাশে মডেল পছন্দ করবেন। তাহলে দ্রুত একটা ভালো সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন। মনে রাখবেন ভালো প্রিন্টারের শেষ নেই। আমি একবার সাড়ে চার হাজার টাকার প্রিন্টার কিনতে গিয়ে পছন্দ না হওয়ায় পরে কয়েক ধাপে বাজেট বাড়িয়ে শেষে দশ হাজার টাকা দিয়ে প্রিন্টার কিনেছি, তবে মনে আফসোস ছিলো যদি আরো দুহাজার টাকা থাকতো তাহলে ওয়াইফাই সুবিধাসহ আরো ভালো একটা মডেল নিতে পারতাম।
চলুন বাংলাদেশের বাজারে বাজেটের মধ্যের কিছু মডেল দেখে নেই– সেরা প্রিন্টার বেছে কেনার উপায়
Canon Pixma iP 2770 Inkjet Printer: কম দামের মধ্যে এই Cannon printer বাংলাদেশে বেশ জনপ্রিয়। ওজন প্রায় সাড়ে তিন কেজি। তবে PG-810 মডেলের কার্টিজ কালি ব্যবহার হওয়ায় প্রতি পেজের প্রিন্টিং খরচ বেশ বেশি। তাই অনেকেই এই মডেলের প্রিন্টার কিনে ইঙ্কট্যাংকে রূপান্তর করে নেন। এতে প্রিন্টিং খরচ কমে যায় কিন্তু গ্রাহক ওয়ারেন্টি হারান। চাইলে নিজের বাসায় কিংবা ছোটো অফিসের কাজে প্রিন্টারটি ব্যবহার করতে পারেন।
দামঃ দেশের বাজারে Cannon এর Canon Pixma iP 2770 Inkjet Printer এর দাম ৪৩০০ থেকে ৪৬০০ টাকা। তবে বাজারে বিভিন্ন কারণে দাম কম বেশি হতে পারে।
HP LaserJet Pro M15a Printer: সাদাকালো দ্রুতগতির দীর্ঘস্থায়ী এই প্রিন্টারটির চাহিদা প্রচুর। প্রতি মিনিটে প্রায় ১৪-২০ টি পেজ প্রিন্ট করতে পারে এই প্রিন্টারটি। এবং মাসে ৮০০০ পেজ পর্যন্ত আপনি নিশ্চিন্তে প্রিন্ট করতে পারবেন। ৩.৮ কেজি ভরের এই প্রিন্টারটিতে আপনি A4, A5, A6, Envelopes সাইজের কাগজ ব্যবহার করতে পারবেন। অফিসের কাজে যেখানে সাধারণত সাদাকালো প্রিন্ট করা হয় সেখানে এই রকম প্রিন্টার নিশ্চিন্তে দীর্ঘদিন ব্যবহার করতে পারেন।
দামঃ দেশের বাজারে HP এর Hp Laserjet Pro M15a Printer এর দাম ৬৮০০ থেকে ৭৩০০ টাকা।
Cannon MP287 Color Multifunction Inkjet Printer: এই মাল্টিফাংশন প্রিন্টারে আপনি প্রিন্ট, স্ক্যান আর কপি করার সুবিধা পাবেন। মোটামোটি কম দামের হওয়ায় ছোটো অফিস কিংবা বাসার কাজে বেশ উপযোগী। তবে কার্টিজ কালি ব্যবহার করে বলে এর প্রতি পেজের খরচ স্বাভাবিকভাবেই বেশি। তবে দামের তুলনায় বেশ ভালো প্রিন্ট দিতে পারে। A4, A5, B5, LTR, LGL সাইজের কাগজ আপনি Cannon MP287 Color Multifunction Inkjet Printer দিয়ে প্রিন্ট করতে পারবেন।
দামঃ Cannon-MP287-Color-Multifunction-Inkjet-Printer মডেল টি মার্কেটে ৭৫০০ থেকে ৮০০০ টাকার মধ্যেই পেয়ে যাবেন।
Epson L130 Inktank Printer: আগেই বলেছি প্রিন্টার কিনার সময় কতো পরিমাণ পেজ প্রিন্ট করা হবে তার ধারণা অবশ্যই অনুমান করতে হবে। কারণ বেশি প্রিন্ট করার প্রয়োজন হলে সাধারণ কার্টিজ ব্যবহার করা ইঙ্কজেট প্রিন্টারে কালির পিছনে প্রচুর খরচ হবে। ভালো কোয়ালিটির বেশি প্রিন্ট করার প্রয়োজনে Epson L130 Iinktank একটি ভালো চয়েজ। মিনিটে প্রায় ২০-২৭টা সাদাকালো ও ১০-১৫টি রঙিন পেজ প্রিন্ট করতে পারে এই প্রিন্টার। কালির দাম তুলনামূলক কম হওয়ায় প্রতি পেজের গড় খরচ খুবই কম। তাই প্রাথমিকভাবে প্রিন্টারের দাম কিছুটা বেশি হলেও অনেক দিন ব্যবহারের জন্য অনেক ভালো পছন্দ হতে পারে এই প্রিন্টার।
দামঃ Epson L130 Inktank Printer প্রিন্টারটির দাম বাজারে ১০,০০০থেকে ১০,৫০০টাকা।
HP 2675 Multifunction Wireless Color Printer: তুলনামূলক কম খরচে এই মাল্টিফাংশন প্রিন্টার আপনাকে দিচ্ছে ওয়াইফাই ফিচার, যাতে আপনি চাইলে মোবাইল ব্যবহার করেও প্রিন্ট করতে পারেন। প্রতি মিনিটে ১৫-২০টি সাদাকালো ও ৪-৭টি রঙিন পেজ প্রিন্ট করতে সক্ষম এই প্রিন্টার প্রিন্ট করতে ব্যবহার করে HP এর Thermal Technology যাতে প্রিন্ট এর শার্পনেস ও হয় বেশ ভালো।
দামঃ HP এর HP 2675 Multifunction Wireless Color Printer মডেলের প্রিন্টারটির দাম ৭৫০০ থেকে ৮০০০টাকা।
তবে খেয়াল রাখবেন মার্কেটে পন্য মজুদ আর চাহিদা উপরে দাম কম বেশি হতে পারে। পুরানো মডেলগুলোর দাম তুলনামূলক কম হয়। অপরদিকে নতুনগুলোয় ফিচার বেশি থাকে। দেখেশুনে জেনে তবেই প্রিন্টার কিনুন।
আরো কিছু পরামর্শ- প্রিন্টার কেনার আগে-সেরা প্রিন্টার বেছে কেনার উপায় -Must Read
(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});- প্রিন্টার কার কাছ থেকে কিনছেন তা অবশ্যই গুরত্বপূর্ণ। কারণ আপনাকে বিক্রয় পরবর্তী সার্ভিস নিয়েও ভাবতে হবে। অনেক সময় কেনার পরেই সমস্যা পাওয়া যায় তখন ওয়ারেন্টির ঝামেলায় যাওয়ার চেয়ে রিপ্লেসমেন্ট ই ভালো সেক্ষেত্রে আপনার বিক্রেতার থেকে ই সরাসরি রিপ্লেস করতে পারবেন।
- প্রিন্টার কেনার আগে অবশ্যই রিভিউ দেখে যাবেন। কারণ বাজারে সেলাররা চাবে যেই প্রোডাক্ট এ তাদের লাভ বেশি সেটি ই গছিয়ে দিতে। তাই আগেই ভালো মন্দ বুঝে নিবেন। কয়েকটি মডেল নির্দিষ্ট করে গেলে ভালো হয়।
- কোন কোম্পানির বিক্রয় পরবর্তী সার্ভিস কেমন তা খেয়াল করা ভালো। ক্যানন- এইচ পি সবার রিপেয়ারিং টাইম ভিন্ন হতে পারে। এমনটা যদি হয় যে প্রিন্টারে সামান্য সমস্যার জন্যে দুমাস সার্ভিস সেন্টারে পড়ে আছে আপনার প্রিন্টার তাহলে সেটা আপনার জন্যে অতিরিক্ত ঝামেলা হয়ে যাবে।
- কার্টিজ কালি ব্যবহার করা প্রিন্টারগুলোর দাম কম কিন্তু কালির খরচ বেশি। আবার ইঙ্কট্যাংক ব্যবিহার করা প্রিন্টারগুলোতে প্রিন্টারের দাম বেশি হলেও কালির খরচ তুলনামূলকভাবে অনেক কম। তাই বেশি প্রিন্ট করার প্রয়োজন হলে একটু বেশি খরচ করে ইঙ্কট্যাংক প্রিন্টার কেনাটাই ভালো। আবার যদি প্রিন্ট খুবই কম হয় তাহলে ইঙ্কট্যাংক এর পিছে অতিরিক্ত টাকা ব্যয় না করাই ভালো হবে।
আশা করি এখন আপনি নিজেই একটা প্রিন্টার কিনতে পারবেন নিজ পছন্দ, চাহিদা আর বাজেটকে যথাযথ গুরুত্ব দিয়ে। শুভকামনা রইলো।
এছাড়া আপনি যদি ভাল মানের রাউটার কিনতে চান তবে – অবশ্যই পড়তে পারেন-কীভাবে চিনবেন ভাল রাউটার ?- কোন রাউটার একটা রুমের জন্য ভাল,কোন রাউটার বেশি এলাকা নিয়ে তার সার্ভিস দেয় ইত্যাদি
[…] […]